শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
The Daily Post

পলিথিন-প্লাস্টিক পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

পলিথিন-প্লাস্টিক পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন

বরিশাল বিসিকে এবার পলিথিন পুড়িয়ে পরীক্ষামূলক জ্বালানি তেল উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা এম এ রশিদ আরিফ। ব্যয় হিসেব করে যদি প্রকল্পটি লাভজনক হয়, তাহলে বড় পরিসরে উৎপাদনে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিসিক নগরীতে অবস্থিত মেসার্স হাসিনা কুটির শিল্পের এই পরিচালক এম এ রশিদ আরিফ।

তরুণ উদ্যোক্তা আরিফ বলেন, ফেলে দেওয়া পলিথিন ও প্লাস্টিক রিসাইকেল করে জ্বালানি তেল তৈরির একটা প্রকল্প আমরা ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছি। যেটা এখনও পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে। আপাতত আমরা কোন ধরনের পলিথিনে কতটুকু জ্বালানি তৈরি হয় এবং কতটুকু খরচ হয় তার হিসেব করছি।

আর খরচের পর কতটুকু আউটপুট আসবে এবং তা থেকে কতটুকু লাভ করতে পারি সেটাও দেখছি। প্রকল্পটি যদি লাভজনক হয় তাহলে বড় আকারে একটি প্লান্ট করার চিন্তা ভাবনা রয়েছি আমার। যেখানে প্রতিদিন এক থেকে দুই হাজার কেজি পলিথিন-প্লাস্টিক থেকে আমরা জ্বালানি তেল তৈরির চেষ্টা করবো।

পরীক্ষামূলক প্রকল্পটিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বড় টিনের ড্রামে পলিথিন ভরে মুখ বন্ধ করে আগুনের তাপ দেওয়া হয়। তাপে ড্রামের সঙ্গে লাগানো পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসা পদার্থ প্রথমে অন্য একটি সিলিন্ডারে ঢুকছে।

এরপর সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি ভর্তি ড্রামের ভেতর (কিছুটা শীতল করার জন্য) হয়ে আলাদা আলাদা সিলিন্ডার কাটা পাত্রে প্রথমে ডিজেল,পরে পেট্রোল তারপর অকটেন বের হচ্ছে। এছাড়া আলাদাভাবে গ্যাসও বের হয়ে আসছে। যে গ্যাসের মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রক্রিয়ার মাঝে থাকা একটি সিলিন্ডারেও তাপ দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদকর্মীদের প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ইউটিউবে দেখতে পাই দেশ ও বিদেশে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করছে। তাদের টিউটরিয়াল দেখে নিজের মাথায় চিন্তা এলো বরিশালের জন্য কোনো কিছু করার। আর এ চিন্তা ভাবনা থেকে পরীক্ষামূলক প্লানটি প্রস্তুত করেছি।

আরিফ আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবেই এটা থেকে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন জ্বালানি তেল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। আর আমরা যখন প্লাস্টিককে তাপ দিচ্ছি তখন প্রথমে একটি বাষ্পীয় আকার তৈরি হচ্ছে। পরে সেখান থেকে তিন ধরনের জ্বালানি তেল তৈরি হওয়ার পরেও গ্যাস তৈরি হচ্ছে। যে গ্যাসকে আমরা প্রকল্পের জ্বালানি হিসেবে ঘুরিয়ে ব্যবহার করতে পারছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বিসিক এলাকায় বৃষ্টি হলেই এখন প্রায়ই রাস্তা ও বাড়িঘরের আশপাশ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সামান্য বৃষ্টি হলে বরিশাল শহরও তলিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ খুজতে গিয়ে দেখলাম ফেলে দেওয়া পলিথিন ও প্লাস্টিক আমাদের ড্রেনেজ সিস্টেমকে ব্লক করে দিচ্ছে। আর এ সমস্যা সমাধানের চিন্তা থেকেই ফেলে দেওয়া পলিথিন সহজে অপসারণের কথা ভাবতে শুরু করি।

তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক প্লান্টে আমরা লাকরি ব্যবহার করছি, এরফলে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। আমার পরবর্তী পরিকল্পনা হচ্ছে প্রকল্পটিকে শতভাগ কার্বনমুক্ত হিসেবে বাস্তবায়ন করা। তাই এটাকে আরও নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করার জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে। এজন্য সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। আর এ সহযোগিতা প্রাপ্তির পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ পেলে প্রজেক্টটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

বিগত ১৫ দিন ধরে কাজ শুরু করা প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী, এটা লাভজনক একটি ব্যবসা হবে। আমি শুরু করেছি, আমার পাশাপাশি আরও কেউ যদি আগ্রহী হয় তাহলে মনে হয় পরিবেশ থেকে ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া পলিথিন ও প্লাস্টিক রিমুভ করতে পারবো। এর মাধ্যমে পরিবেশ থেকে ক্ষতিকারক পলিথিন ও প্লাস্টিক ধ্বংস হয়ে যাবে।

এআই