রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Post

গাজায় আরও ১১৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় আরও ১১৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা বন্ধ ও ইসরায়েলের অবরোধের মধ্যেই অনাহারে ৩৫ দিন বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি লাগাতার হামলায় আরও ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

রোববার (২০ জুলাই) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। ১১৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।  

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর মধ্যেই গাজায় আবারও একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক নবজাতক অনাহারে মারা গেছে।

শিশুটি শনিবার গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণে মৃতদের মধ্যে এই নবজাতকও রয়েছে। এদিন অন্তত দুজন ব্যক্তি অনাহারে মারা যান আমাদের হাসপাতালে।  

শিশু মৃত্যুর এই ঘটনাগুলো এমন একসময় ঘটেছে যখন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো খাবারের অভাবে কাতর হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে। অন্তত ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

এদিকে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় শনিবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে কমপক্ষে ১১৬ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলি খেয়ে।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাফাহের উত্তর-পশ্চিমে দুটি আলাদা স্থানে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। তারা এই প্রাণহানির পেছনে ইসরায়েলি হামলাকে দায়ী করেছেন।

মোহাম্মদ আল-খালিদি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী আলজাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছা করে গুলি চালিয়েছে। একদিকে জিপ আর অন্যদিকে ট্যাংক আসতে দেখে আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা গুলি শুরু করে।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-বারবারি তার চাচাতো ভাইকে হারিয়েছেন জানিয়ে বলেন, এই কেন্দ্রগুলো আসলে মৃত্যু ফাঁদ। মানুষ শুধু একটু খাবারের আশায় আসে, কিন্তু ফিরে যায় লাশ হয়ে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের মহাসচিব জগন চাপাগাইন বলেন, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। কাউকে যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক মুঠো খাবার সংগ্রহ করতে না হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজার বাজারগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, আর খাদ্যদ্রব্যের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে ২৩ লাখ মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড জানান, গত ১৪২ দিনে আমরা একটি ট্রাকও গাজায় প্রবেশ করাতে পারিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে নেতা বলছেন সহায়তা প্রবাহ স্বাভাবিক হচ্ছে, তা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না।

এ ছাড়া, জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, তারা পুরো গাজার জন্য যথেষ্ট খাদ্য মজুত রেখেছে মিসরের সীমান্তে, কিন্তু ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো প্রবেশ করতে পারছে না।

সংস্থাটি দাবি করে বলেন, সীমান্ত খুলুন, অবরোধ তুলে নিন এবং আমাদের কাজ করতে দিন।

টিএইচ