লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক শেষ হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিট) বৈঠকটি শেষ হয়। সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) লন্ডনের পার্ক লেন হোটেল ডোরচেস্টারে বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠক শেষে তারেক রহমান ডরচেস্টার হোটেল ত্যাগ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, তাঁদের মধ্যে একান্তে এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানানো হয়েছে।
তারেক রহমান হোটেলের সামনে পৌঁছালে তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম স্বাগত জানান।
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময়ে সকাল ৮টায় বৈঠকে যোগ দিতে বাসা থেকে রওনা দেন তারেক রহমান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে লন্ডনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ব্রিফিং করবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি ও সরকারের সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপসহ অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে। ড. ইউনূসের দিক থেকে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন যেমন আলোচনার টেবিলে থাকবে, তেমনি তারেক রহমানের দিক থেকে গুরুত্ব পাবে নির্বাচনের তারিখ, রোডম্যাপসহ সরকার ও প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। তবে কোনো পক্ষই আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ করেনি।
অবশ্য বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার একটি সূত্র জানায়, বৈঠকের আলোচ্যসূচি নির্ধারণের জন্য লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধির সঙ্গে তারেক রহমানের প্রতিনিধি দলের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। গত বুধবার এ আলোচনা হয়। বৃহস্পতিবারও তারেক রহমানের একজন প্রতিনিধি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেছেন বলে এক ভিডিও বার্তায় জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিএনপির সূত্র জানায়, সরকার ও তারেক রহমানের প্রতিনিধির আলোচনায় বৈঠকের আলোচ্য বিষয় হিসেবে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার বিষয়টি ছিল। পাশাপাশি সংস্কার, বিচার ছাড়াও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কথা হয়। দু’পক্ষই এর মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার ও বিএনপির যে মতপার্থক্য আছে, তা কমিয়ে আনার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে।
চার দিনের সফরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। আর ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। সেখান থেকে তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সোমবার সরকার ও বিএনপির তরফ থেকে আজকের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এ বৈঠক নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফলে সবার চোখ এখন লন্ডনের এ বৈঠকের দিকে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ বৈঠককে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বৈঠকটি যেহেতু শীর্ষ পর্যায়ের, অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ই উঠে আসবে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে নিয়ে আসার বিষয়টি আসবে। আলোচনায় আসবে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার বিষয়ও।
তিনি আরও বলেন, সরকার ও প্রশাসনে এখনও স্বৈরাচারের দোসরদের অবস্থানের বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাবে। এ ছাড়া দেশে আইনের শাসন ও আদালতের রায় মেনে চলার ওপরেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। সংস্কারের বিষয়ও উঠতে পারে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, শীর্ষ পর্যায়ের এই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় ভিত্তিতে একটা গ্রহণযোগ্য ফয়সালা বা সিদ্ধান্ত হবে। এটা আমাদের প্রত্যাশা; জাতিরও প্রত্যাশা তা-ই।’
তবে সোমবার অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোন কোন বিষয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করবেন– সে দায়িত্ব পুরোপুরি তারেক রহমানের ওপর অর্পণ করা হয়।
ঈদুল আজহার আগের দিন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছে, তাকে যৌক্তিক মনে করছে না বিএনপি। দলটি মনে করে, নির্বাচনের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরই উপযুক্ত সময়। তবে নির্বাচন আগামী বছরের জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে অর্থাৎ রোজার আগে হলেও দলটির আপত্তি থাকবে না বলে বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে। তাই বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মূল ফোকাস থাকবে নির্বাচনের ওপর; বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার বিষয়ে।
দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মী এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায়। ইতোমধ্যে তিনি সব মামলা থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে আসতে কোনো সমস্যা নেই। ফলে এ বৈঠক নিয়ে যে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে, তার সঙ্গে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ও যুক্ত হয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিক বলেন, এ বৈঠক ঘিরে লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যেও রয়েছে সমান কৌতূহল। আজ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বৈঠকের স্থান হোটেল ডোরচেস্টারের সামনে বিএনপি নেতাকর্মী জমায়েত হবেন।
টিএইচ