বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Post

আনোয়ারা গহিরা উপকূলে আটকা পড়া দুই জাহাজের কারণে ঝুঁকিতে বেড়িবাঁধ

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

আনোয়ারা গহিরা উপকূলে আটকা পড়া দুই জাহাজের কারণে ঝুঁকিতে বেড়িবাঁধ

চট্টগ্রামের  আনোয়ারা গহিরা সমুদ্র উপকূলের এক কি.মিটারেরও বেশি এলাকায় তীব্র ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যার কারণে এই এলাকার মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ পরবর্তী ঝড়ো হাওয়ায় উঠান মাঝির ঘাটে এলাকার উপকূলে আটকে যাওয়া দুটি জাহাজের কারণে স্রোতের গতিপথ বদলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বেড়িবাঁধ।

হুমকিতে আছে স্থানীয় জামে মসজিদ। তলিয়ে গেছে কবরস্থান ও বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা। আটকে পড়া জাহাজের ধাক্কায় ছিড়ে গেছে বালিভর্তি জিও ব্যাগ। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী একমাসের মধ্যে মসজিদ ও কবরস্থান সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। এদিকে আটকে পড়া জাহাজটি সরানোর বিষয়েও কোনো  সুরহা হচ্ছে না।

বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জাহাজ দুটি গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে জব্দ রয়েছে বলে জানা গেছে। জাহাজ দুটি বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় জোয়ারুভাটার স্রোতে কখনো কুতুবদিয়া, কখনো মগনামাসহ বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ভেসে বেড়ায়। সর্বশেষ গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তির আঘাতে গহিরা উঠান মাঝির ঘাট উপকূলে আটকে পড়ে। আর এতে কপাল পুড়েছে স্থানীয়দের।

যার ফলে ভাঙনের তীব্রতা আগের চেয়ে আরো কয়েকগুণ বেড়েছে। বর্তমানে কোস্টগার্ড সদস্য ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়াচম্যানরা জাহাজ দুটির পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয়রা  অতিদ্রুত জাহাজ দুটি সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা বলেন, গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ পরবর্তী ঝড়ো হাওয়ায় গহিরা উপকূলের উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় জাহাজ দুটি আটকে পড়ে। বাতাসের তীব্রতায় জাহাজ দুটি আছড়ে পড়ার সময় বেড়িবাঁধের ভাঙন রোধে দেয়া জিও টিউবের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উঠান মাঝির ঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধের এক কিলোমিটারের বেশি অংশজুড়ে পাথরের ব্লক নেই। কিছু কিছু অংশে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ও টিউব দিয়ে ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উঠান মাঝির ঘাটের মসজিদের অস্থায়ী বাঁধ ঘেঁষে জাহাজ আটকে যাওয়ায় সাগরের মোহনায় সৃষ্ট ঢেউ জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘূর্ণায়মান স্রোত তৈরি করছে। যার ফলে দ্রুতই সরে যাচ্ছে বেড়িবাঁধের গোড়ার মাটি। জোয়ারের সময় সাগরের ঢেউ এসে লাগছে স্থানীয় জামে মসজিদের দেয়ালের সঙ্গে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাস্টার মুহাম্মাদ ইদ্রিস আলম জানান, এক বছর আগেও এখানে সাগর ছিল ৩০০ ফুট দূরে। তীব্র স্রোত ও ভাঙনে এখন তা বেড়িবাঁধে এসে ঠেকেছে। এখানে ৩৫০ পরিবারের বিশাল সমাজের শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। ঘাটের মাছ ধরার মাঝিরাও এই মসজিদে নামাজ পড়েন। চোখের সামনে মসজিদটা বিলীন হওয়ার অবস্থা। 

বেড়িবাঁধের ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় ৩৫০ পরিবারের অনেকে বাপ দাদার ভিটামাটি ছেড়ে যাচ্ছেন। দ্রুত আটকে পড়া জাহাজ দুটি সরানো না গেলে পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে জানান তিনি।

আটকে পড়া জাহাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোস্টগার্ড সদস্য সত্তারুল জানান, জাহাজ দুটি আটকে পড়ার পরদিন থেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ জানান, আনোয়ারার রায়পুর উপকূলে বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিভিন্ন অংশে জিও টিউব বসানো হয়েছে। আটকে পড়া জাহাজ দুটির কারণে আমাদের স্থানীয় মসজিদ, কবরস্থান ও বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।

টিএইচ