মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

চৌগাছার ১৮ ডাকঘরে নেই কর্মব্যস্ততা

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

চৌগাছার ১৮ ডাকঘরে নেই কর্মব্যস্ততা

যশোরের চৌগাছায় ১৮ টি ডাকঘরে নেই কর্মব্যস্ততা। কেউ আর প্রিয়জনের কাছে কলম দিয়ে কাগজে লেখে না চিঠি। চিঠির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা স্মৃতি, নানা আবেগ। এক সময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। মোবাইল ফোন ও ই-মেইলের যুগ আসার আগে চিঠির কদর ছিল সর্বত্র। 

চিঠি লেখার আবেগ বর্তমানের ম্যাসেঞ্জারের টেক্সট অথবা মেইলে পাওয়া যায় না। আগে একেকটি চিঠি যেন হয়ে উঠতো একেকজনের জীবনে প্রাণের সঞ্চার। আজকাল দাপ্তরিক কাজ ছাড়া চিঠির ব্যবহার নেই বললেই চলে। ফলে উপজেলার ১৮ টি ডাকঘরে নেই আগের মতো কর্ম ব্যস্ততা। 

সরেজমিনে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বেশ কয়েকটি ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায় পোস্ট মাস্টারের কক্ষটিও তালাবদ্ধ। কক্ষের বাইরে দেয়ালে ঝুলানো মরিচা ধরা ডাক বাক্সটি পড়ে থাকলেও তাতে নেই কোন চিঠি। 

এক সময় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিঠি পত্র চলে আসত চৌগাছা প্রধান ডাকঘরে। হাজার হাজার চিঠিপত্র কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দম ফেলার ফুরসত ছিলো না। কালের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠানটি চিরচেনা কর্ম চাঞ্চল্য পরিবেশ যেন হারিয়েছে। চৌগাছা প্রধান পোস্ট অফিসের সাথে রয়েছে ১৮টি পোস্ট অফিস। 

এগুলো হলো হাট যাদবপুর, নারায়নপুর, জলুলীবাজার, রামকৃষ্ণপুর, সুখপুকুরিয়া, স্বরুপদাহ, গুয়াতলী, মান্দারবাড়ীয়া, বাথানগাছি, সিংহঝুলী, ফুলসারা, মাশিলা, মুক্তারপুর, জগদিশপুর, পাতিবিলা, মাড়ুয়া, হিজলীবাজার ও হাকিমপুর পোস্ট অফিস।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চৌগাছা উপজেলার প্রধান ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, অফিসে প্রায় সবাই সঞ্চয় হিসাবের কাজে এসেছেন। তবে দুঃখের বিষয় চিঠি পোস্ট করতে একজনকেও পাওয়া যায়নি। চিঠি বাছাই করার টেবিলটিও খালি পড়ে ছিলো ।

উপজেলার চৌগাছা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার শাহানাজ পারভীন বলেন, একটা সময় প্রতিদিন যশোর জেলা প্রধান পোস্ট অফিস থেকে শত শত চিঠি নিয়ে আসা হতো। এখন ব্যক্তিগত চিঠি আদান-প্রদান নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র অফিশিয়াল কাজে কিছু চিঠির ব্যবহার হয়। একটা সময় চিঠি পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন থাকতো পোস্ট অফিসে। মানুষ ডিজিটাল সিস্টেমের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বেশি।

ডাক পিয়ন বিরাম কুমার সরকার বলেন, আমি যখন আগে চিঠি নিয়ে যেতাম মানুষ আমাকে দেখলেই তার নিজের কোন চিঠি আছে কী না জিজ্ঞেস করতো। দৌড় দিয়ে কাছে আসতো চিঠি নেয়ার জন্য। আর এখন খুঁজে খুঁজে অফিশিয়াল কোন চিঠি থাকলে গিয়ে নিয়ে দিতে হয়।

যশোর প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার নাসরুল্লাহ ইবনে হাকিম জানান, চিঠি হলো যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। চিঠির মাধ্যমে একজন আরেকজনের অনেক আপন হয়ে উঠে। পরিবারের সুখ দুঃখ প্রকাশ পায় চিঠির মাধ্যমে। আগে প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিল না। তাই মানুষ চিঠিকেই বেছে নিয়েছিল যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে। 

এখন কেউ ব্যক্তগত চিঠি দিতে পোস্ট অফিসে আসেন না। রেজিস্ট্রি ডাক, অফিশিয়াল চিঠি, সঞ্চয় হিসাব এগুলোই বেশি দেখা যায় পোস্ট অফিসে। এখন পোস্ট অফিসে মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

টিএইচ