মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

ঝালকাঠিতে ৯২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কাগুজি লেবু চাষ 

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠিতে ৯২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কাগুজি লেবু চাষ 

ঝালকাঠি জেলার ২২টি গ্রামের ৯২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় সুগন্ধি কাগুজি লেবুর। ভিটামিন-সি যুক্ত রসালো লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা ঝালকাঠিসহ সারাদেশের বাজার। 

বাজারে বিভিন্ন জাতের লেবু বারোমাস পাওয়া গেলেও মৌসুমী এ কাগুজি লেবুর চাহিদাই বেশি। সদর উপজেলার কৃষি অঞ্চল খ্যাত কির্তিপাশা, নবগ্রাম ও গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামেই কাগুজি লেবুর উৎপাদন হয়। গ্রমীণ হাট-বাজারে বিক্রি হলেও মূল মোকাম ভীমরুলী।  

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলীর ভাসমান লেবুর হাট চলতি মৌসুমে জমে উঠেছে। প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ লেবু কেনা-বেচা হচ্ছে। পাইকাররা নৌকা থেকে লেবু কিনে গাড়িতে করে বরিশাল আড়তে নিয়ে বিক্রি করছে।

অনেকে মালবাহী ট্রলার বা ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফরমালিন ও কেমিকেলমুক্ত সুগন্ধি কাগুজি লেবু সবার কাছেই প্রিয়। ঝালকাঠির বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, কির্ত্তীপাশা, মিরাকাঠিসহ ২২টি গ্রাম এখন লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা। প্রতিদিন এসব গ্রামের কৃষকরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় ভিমরুলী বাজারে নিয়ে আসেন। অপেক্ষমান পাইকাররা ট্রলারে বসেই লেবু কিনে রাখছে।

লেবু চাষীরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। গত বছর ১ পোন (৮০টি) লেবু ছিল আড়াইশ টাকা। এবার তা ৪শ টাকা। গ্রামের কৃষকরা সজ্জন পদ্ধতিতে (কাঁদি কেটে) লেবু চাষ করছেন। একেকটি কাঁদি ১শ থেকে ১১০ হাত লম্বা এবং ৭-৮ হাত চওড়া হয়। প্রতিটি কাঁদিতে ২২ থেকে ২৫টি গাছ লাগানো যায়। 

এরকম ১ বিঘার কাঁদিতে লেবু চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ফল ধরার পর প্রতিবছর লেবু বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়া যায়। সে হিসেবে লেবু বিক্রি করে প্রতিবছর কৃষকরা আয় করছে দেড় থেকে ৩ কোটি টাকা।

লেবুর পাইকার ব্যবসায়ী রহমান জানান, পটুয়াখালী থেকে মালবাহী ট্রলার এলে সেই ট্রলারে পটুয়াখালী মোকামে পাঠানো হয়। ওখানের কাঁচামাল বিক্রেতাদের আগেই চুক্তি করা থাকে। কেনা দামের ওপর লাভ রেখে বিক্রি করা হয়। পাইকাররা জানান, তীব্র গরমে  কারণে ঘেমে শরীর দুর্বল হয়। জ্বর,  সর্দি, কাঁশিতে আক্রান্ত হলে লেবুর শরবত পান করলে আরোগ্য লাভ করে। তাই কাগুজি লেবুর চাহিদা প্রতিবছরের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। 

ডুমুরিয়া গ্রামের লেবু চাষী তপন মণ্ডল জানান, ভীমরুলী থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে পাইকাররা কিনে তা সরবরাহ করেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে লেবুর ফলন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর কম হলেও কৃষকরা ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি। দেশীয় সুগন্ধিযুক্ত কাগুজি লেবু ছোট হলেও ভেতরে পর্যাপ্ত রস থাকে। লেবু চাষীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গাছের পরিচর্যাসহ সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়। প্রতিবছরের মতো এবছরও তিন কোটি টাকার বেশি বিক্রি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। 

টিএইচ