শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫
ঢাকা শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

নাটোরে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নাটোরে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। রং-বেরংয়ের মালা পড়িয়ে গরু-ছাগলকে হাটে তোলা হচ্ছে। নাটোর জেলার আশেপাশের এলাকা থেকে নাটোরের হাটগুলোতে ছোট-বড়-মাঝারী বিভিন্ন জাতের গরু-ছাগলের সমাগম হয় নছিমন, ভটভটি আর ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে।

ঐতিহ্যবাহী তেবাড়িয়া, সিংড়া ও মৌখড়া হাটের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে আরও কয়েকটি হাট। করোটা, ডাঙ্গাপাড়া, গুনাইখাড়া, গোপালপুর, দয়ারামপুর, মালঞ্চি ও জোনাইল নাটোরের উল্লেখযোগ্য হাট। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সপ্তাহের প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট হাটগুলো ঢাকার ব্যাপারি আর স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহলে থাকে মুখরিত।

নাটোরের প্রধানতম তেবাড়িয়া হাটে গরু-ছাগলের সমাহার অতীতে বেশি হলেও বর্তমানে তা জৌলুস হারাচ্ছে। এই হাটে বর্তমানে কোরবানির পশুর সমাহার অনেক কমে গেছে।

দালালদের দৌড়াত্বের কারণে যেমন গৃহস্থ তথা কোরবানির পশু বিক্রেতারা হিমশিম খায় তেমনি কোরবানির পশুর ক্রেতারাও হেনস্তার শিকার হন। এ ব্যাপারে গরু কিনতে আসা মামুন, দবিরুল, আফসারসহ অনেকে বলেন তেবাড়িয়া হাটে এখন দালালদের দৌরাত্ম্য বেশি। ১টা গরুর সাথে ৪-৫ জন দালাল ভিড়ে থাকে। তাই গরুর দামটাও বেশি পড়ে।

তাছাড়া যেখানে অন্য হাটে বাঁশের সারি দিয়ে গরু বাঁধা থাকে সেখানে এই হাটে ব্যাপারিরা যত্রতত্র গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়। গরুর গোবর আর চানায় পরিবেশ নোংরা আর হাটার অনুপযোগী হয়ে থাকে। আর খাজনাও বেশি।

মূলতঃ, তেবাড়িয়া হাটের এমন অব্যবস্থাপনার কারণেই সিংড়া, মৌখড়া, করোটা ও গোবিন্দপুর ডাঙ্গাপাড়ায় গরুর সমাহার এবার লক্ষণীয়। এসব হাটে কোরবানির পশু কিনতে আসা অনেক ক্রেতাই বলেন, বড় জাতের গরুর দাম কম হলেও ছোট আর মাঝারী জাতের গরুর দাম নাগালের বাইরে। তবে এবার ভারতীয় গরুর আমদানির চেয়ে দেশি জাতের গরুর সমাহার বেশি। তারা বলেন, ভারতীয় গরু আমদানি না হওয়ায় গৃহস্তরা দেশি জাতের গরু-ছাগল উৎপাদনে উৎসাহিত হয়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে এবার নাটোর জেলায় সরকারিভাবে কোরবানি যোগ্য পশু আছে মোট ৫ লাখ ১৪ হাজার ২১৫ টি। এরমধ্যে গরু ১ লাখ ১৮ হাজার ৩১৭টি, মহিষ ৭ হাজার ৯২৮টি, ছাগল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৭টি, ভেড়া ৩৮ হাজার ৪৫১টি এবং দুম্বা ৩২টি। জেলায় এবছর কুরবানি পশুর চাহিদা ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০৫টি।  উদ্বৃত্ত ২ লাখ ৪১ হাজার ১০টি কোরবানির পশু জেলার বাইরে রপ্তানি হবে।

পশু মোটাতাজাকরণে বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার না করে নিরাপদ উপায়ে পশু হূষ্ট-পুষ্টকরণ করেছে নাটোরের খামারিরা। আর এ কাজে জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৯৫ জন খামারিকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১৪টি উঠান বৈঠক এবং প্রায় ৫ হাজার লিফলেট বিতরণও করেছে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

পশু ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি পশু পরিবহন, অর্থ লেনদেনে সাবধানতা অবলম্বন বিষয়েও খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এবার নাটোরের পশুগুলো মারাত্মক লাম্পি স্কিন রোগ থেকেও মুক্ত আছে বলে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে।

নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, জেলায় এবছর প্রায় ২০০০ কোটি টাকার কুরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। সবগুলো পশুই সুস্থ আছে। জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট মিলিয়ে মোট ২৬টি হাটে হাট চলাকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক মেডিক্যাল টিম ও ভেটেরিনারী ক্যাম্প থাকবে যেখানে হাটে আসা পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে সুচিকিৎসা দেয়া হবে। এবার নাটোরে লাম্পি স্ক্রিন রোগের কোন প্রাদুর্ভাব নেই বলেও জানান এই জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

টিএইচ