সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শোনা যায় একটানা কিচিরমিচির ধ্বনি। গাছের ডালে ঝুলে থাকা শৈল্পিক নীড়ে ব্যস্ত বাবুই পাখির আনাগোনা। গাছের পাতা, খড়কুটো দিয়ে বোনা সেই বাসা যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা এক নিখুঁত স্থাপত্য। তাই তো বলা হয়-বাবুই পাখি প্রকৃতির নিজস্ব এক ‘স্থপতি’।
গ্রামবাংলার বিল-জঙ্গল, তাল-খেজুর গাছে আগে বাবুই পাখির অসংখ্য বাসা দেখা যেত। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুইয়ের সেই কোলাহল বা বুননের দৃশ্য।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর বড় নাগার মাঠ। দুই পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের আবাদ। মধ্যদিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। সেই সড়কের ধারে নাগার খালের একপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি তালগাছ। সেইগাছে শতাধিক বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। তার ঠিক ২০০ গজ দূরে আরও কয়েকটি তালগাছ, সেখানেও বাসা বেঁধেছে শতাধিক বাবুই পাখি। বাবুই পাখি সাধারণত দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। এরা দল বেঁধে তালগাছ বা নারকেল গাছে বাসা বেঁধে থাকে।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের আগেই বাবুই পাখির বাসায় আসবে নতুন অতিথি। তাই সময়ের আগেই তারা বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। বাবুই পাখির বাসা তৈরির জন্য খেজুর পাতা একটি অন্যতম উপাদান। তারা খেজুর পাতা, খড় এবং ঘাস ব্যবহার করে চমৎকার বাসা তৈরি করে। বর্ষার আগে, বাবুই পাখিরা নতুন বাসা বানানোর জন্য ব্যস্ত থাকে। বাবুই পাখির বাসা সাধারণত তাল ও নারকেল গাছের মাথায় দেখা যায় কারণ এটি তাদের বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান এবং নিরাপত্তা প্রদান করে।
তারা তাল গাছের পাতা ব্যবহার করে বাসা তৈরি করে যা তাদের বাসাকে শক্তিশালী করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। বাবুই পাখির বাসা তৈরির প্রক্রিয়াটিও বেশ আকর্ষণীয়, যেখানে পুরুষ বাবুই বাসা তৈরি করে এবং স্ত্রী বাবুই বাসা পরিদর্শন করে। বাসা তৈরি শেষ হতেই স্ত্রী-পুরুষের মিলন হয়। স্ত্রী গড়ে তিনটি ডিম পাড়ে।
স্ত্রী ডিমে তা দেয়া শুরু করলেই পুরুষ পাখি বাসা ত্যাগ করে। নতুন বাসা বানানো শুরু করে ও আবার ঘর বাঁধে। আর এভাবেই একটি পুরুষ বাবুই মৌসুমে দুই, চার বা ততধিকবার বংশবৃদ্ধি করে। ডিম থেকে ছানা ফুটতে ১০ থেকে ১৩ দিন সময় লাগে। মা বাবুই ছানাদের কীটপতঙ্গ খাইয়ে বড় করে তোলে। এরপর ধান-গম-শস্য দানা খাওয়া শেখায়। ছানারা ১৫ থেকে ১৯ দিনে উড়তে শেখে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতিবছরেই এই তালগাছগুলোতে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। সারাদিন কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। তবে অনেকে বাসা নেয়ার জন্য গাছে ডিল ছুড়ে। সরকারি গাছ হওয়ায় আমরা নিষেধ করার পরও তারা শোনেনা।
মেহেরপুর মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল আমিন ধূমকেতু বলেন, বাবুই পাখিকে শ্রেষ্ঠ কারিগর বলা হয়। তালগাছ, নারকেল গাছ, খেজুর গাছে এরা বাসা বাঁধে। কিন্তু এসব গাছ নিধনের কারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। এসব পাখিদের রক্ষা ও তাদের অভয়াশ্রম তৈরিতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
টিএইচ