মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

২৬ বছর সাজাভোগ করা ব্যক্তির পাশে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

২৬ বছর সাজাভোগ করা ব্যক্তির পাশে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসন

জমিজমা নিয়ে বিবাদে প্রতিবেশীকে খুন করার অপরাধে টানা ২৬ বছর দুই মাস সাজা ভোগ করেন রংপুরের মঞ্জুর আলম। ৩৪ বছর বয়সে দুই পূত্রসন্তান আর স্ত্রীকে রেখে কারাজীবন শুরু হয় তার। এরপর পৃথিবীর বাইরের আলো-বাতাস ছেড়ে তাকে সোজা কারাবাসে বছরের পর বছর কাটাতে হয়েছে।
 
মঞ্জুর আলম জানালেন, ‘জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে বের হয়ে প্রথমে আতঙ্ক অনুভব করি। বাইরে এত লোকসমাগম, বাড়িঘর, যানবাহন দেখে চমকে উঠি। যখন জেলখানায় ঢুকি, তখন রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে একটি গাড়ি আরেকটিকে পাশ কাটাতে পারত না। এখন দেখি বিশাল রাস্তা হয়েছে। হয়েছে বিশাল বিশাল ভবন। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে।’

গত ১১ ডিসেম্বর রংপুর পৌরসভার হাবীবনগর এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের পুত্র মঞ্জুর আলম দীর্ঘ কারাবাসের পর কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পান। ১৯৯৭ সালে আদালতের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর বাইরে বের হয়ে কী করবেন— সে বিষয় নিয়ে হতাশ ছিলেন মঞ্জুর আলম। বাড়িতে গিয়ে অভাবের সংসারে ঢুকে কোনো আনন্দই পাননি বলে জানান তিনি। 

এত বছর পর স্ত্রী-সন্তানদের দেখে তার মনে কোনো উচ্ছ্বাস জাগেনি। এমন পরিস্থিতিতে তার অসহায়ত্বের কথা জেনে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য পাশে দাঁড়ান। 

তিনি কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মঞ্জুর আলম জেলখানায় দীর্ঘ সময় ধরে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেছেন। তার বড় ছেলে সুরুজ আলম রংপুর ট্রাকস্ট্যান্ডে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। ছেলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসক সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে মঞ্জুর আলমকে ৪০ হাজার ৭৬০ টাকার উপকরণ কিনে দেন। যার মধ্যে রয়েছে ড্রিল মেশিন, ওয়েল্ডিং মেশিন, রিং-ডাল সেট, স্লাইড মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণ।

কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার আবু সায়েম জানান, মঞ্জুর আলম খুব সাদাসিধেভাবে থাকতেন। তিনি রান্নাবান্না করা, হস্তশিল্পের কাজ, ইলেকট্রিসিটি ও প্লাম্বারের কাজ জানতেন।

সদ্য কুড়িগ্রাম কারাগারে যোগদান করা জেল সুপার সফিকুল আলম জানান, মঞ্জুর আলম সাজা ভোগের পর মুক্তি পেয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাইরের দুনিয়ায় গিয়ে কী কাজ করবেন। তার মতো অসহায় লোকের পাশে জেলা প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়ানোয় আমরা খুবই খুশি হয়েছি।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, দীর্ঘ কারাভোগের পর মঞ্জুরুল আলম কিছুটা অন্তর্মুখী হয়ে পড়েন। পরিবারে তার ছোট ছেলে অনার্সে পড়ছে। বড় ছেলের আয়ে কোনোভাবে সংসার চলছে। তার পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জেনে আমরা চেয়েছি তিনি কাজের মধ্যে থেকে সংসারে উপার্জনের মাধ্যমে কর্মমুখী থাকুন। 

টিএইচ