কুষ্টিয়া জুড়ে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। একের পর এক হত্যা, চুরি, ডাকাতিসহ ভুমি জালিয়াতি করে নিজেদের দখলে নেয়ার ঘটনায় সাধারণ মানুষ সার্বক্ষনিক আতংকের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন রাজনৈতিক দলের চাপের কারণে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারছে না।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এখন রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে হত্যাকাণ্ডসহ হামলা, সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। ফলে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে দৌলতপুরবাসীর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের মত নির্মম এবং আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন অভিমত সচেতন মহলের। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত দেড় মাসেরও কম সময়ে দৌলতপুরে অন্তত ১০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
বিভিন্ন ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ১৩ জুন গরুতে জমির পাট খাওয়াকে কেন্দ্র করে মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদের সামনে উজ্জল সরদার ও বজলু মালিথার মধ্যে বাক বিতন্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে একে অপরকে আঘাত করা হয়।
সংঘর্ষে বজলু মালিথা গ্রুপের বজলু মালিথা ও শরিফুল মালিথা গুলি এবং ধারাল অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জন জালাল মালিথা ও মন্টু মালিথা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জোড়া খুনের ঘটনায় উজ্জল সরদারকে প্রধান আসামি করে ৩২জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২২-২৫জন অজ্ঞাত হামলাকারীদের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা করা হয়। এ মামলায় এজারহার নামীয় ৬ আসামি গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১০জুন উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের পাককোলা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাহমুদুল হাসান ওয়াহিদের ছেলে মামুন ও মাহফুজুর রহমান ইরেনের তর্ক বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে মামুন ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠি দিয়ে চাচা মাহফুজুর রহমানকে (৬৫) মাথায় আঘাত করলে সে মাটিতে লুাটিয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গত ২ মে জমি বিরোধে ১৩ মামলার আসামি জাকির মোল্লা (৪৫) নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে।
একইদিন দৌলতপুরের পদ্মারচর থেকে মারুফ হোসেন (৩৮) নামে এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচরের নীচে পদ্মা নদী থেকে ওই যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবক দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর গ্রামের হাজী আসালত মণ্ডলের ছেলে।
গত ২৭ এপ্রিল চিলমারীর চরে এক শতাংশ জমি নিয়ে শিকদার ও খা পক্ষের লোকজন মণ্ডল পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা করে। এসময় তারা বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
হামলায় ৬ জন আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধসহ ১৬ জন আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অগ্নিদগ্ধদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ ফারুক মণ্ডল (২৪), আক্তার মণ্ডল (৩৭) ও দিনু মণ্ডলের (৭০) মৃত্যু হয়।
এছাড়াও উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে নুর সালাম (৩০) নামে এক মানষিক প্রতিবন্ধীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। সে একই এলাকার শুকুর মণ্ডলের ছেলে।
এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল নুর সালামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন।
এদিকে খোকসা থানার পাশেই দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। এই ঘটনায় ২জনকে পুলিশ আটক করলেও প্রধান আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ প্রশাসন বলছে সন্ত্রাসী করে কেউ পার পাবে না। সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
টিএইচ