শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
The Daily Post

জমির ত্রিমুখী মালিকানা জটিলতা সখীপুরে খাজনা আদায় বন্ধ দেড় যুগ

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

জমির ত্রিমুখী মালিকানা জটিলতা সখীপুরে খাজনা আদায় বন্ধ দেড় যুগ

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ৬১টি মৌজার প্রতিটিতেই রয়েছে জমির ত্রিমুখী মালিকানা জটিলতা। একই দাগের জমির মালিকানা দাবি করেন ব্যক্তি, সরকার ও বন বিভাগ। এর মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে ডিজিটাল জরিপ। এরই অংশ হিসেবে সমপ্রতি আটটি মৌজার সীমানা চিহ্নিতকরণ শুরু হয়েছে। 

তবে মালিকানা জটিলতা নিরসন করে ‘ডিজিটাল জরিপ’ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী প্রতিটি মৌজার একই দাগের জমির মালিক তিনটি পক্ষ। কিছু দাগে জমির পরিমাণের বিপরীতে লেখা- এরিয়া দখল মোতাবেক। বেশির ভাগ দাগে মালিকানা স্বত্বের বিপরীতে পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও সুনির্দিষ্ট সীমানা চিহ্নিত নেই। 

জমিদারি শাসন আমলেই এ জটিলতার সূত্রপাত। তবে ২০০৬ সাল থেকে খাজনা নিচ্ছে না ভূমি কার্যালয়। এসব জটিলতায় আটকে আছে রেকর্ডীয় ভূমির খাজনা আদায়, নামজারি ও সাব-রেজিস্ট্রি দলিল নিবন্ধন। ভূমি হস্তান্তর হচ্ছে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি।

সরেজমিন জানা গেছে, ভূমির ত্রিমুখী জটিলতা নিরসনে ১৯৭৬ সালে ১২টি সিএস মৌজা ভেঙে ১৪টি মৌজায় রূপান্তর করে আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) রেকর্ডের কার্যক্রম শেষ করে সরকার। বিধি অনুযায়ী, ১৪টি মৌজার মধ্যে ৯টির গেজেট ও আটটির স্বত্বলিপি প্রকাশিত হয়। এতে তিন পক্ষের পৃথক খতিয়ান সৃজন হলেও ওই রেকর্ডের আটটি মৌজার খাজনা আদায়ের মুহূর্তে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আপত্তি দেয় বন বিভাগ, যা বিধিবহির্ভূত। এতে ভেস্তে গেছে আরএস রেকর্ডের সব কার্যক্রম।

জানা গেছে, বন বিভাগের অহেতুক আপত্তিতে যেসব কারণ দেখিয়ে ১৪টি মৌজার আরএস রেকর্ডের স্বত্বলিপি অকার্যকর করা হয়েছে, সেসব জটিলতা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। নিজ নিজ পক্ষের মালিকানা স্বত্বের জটিলতা সমাধান না করে ফের সেই মৌজাগুলোতেই ‘ডিজিটাল জরিপ’-এর প্রস্তুতি চলছে। এটি ‘সম্পূর্ণ অহেতুক ডিজিটাল কার্যক্রম’ বলে দাবি ভূমি মালিকদের। 

সরকার ও বন বিভাগের সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানার জটিলতা নিরসন করে ‘ডিজিটাল জরিপ’ শুরু করার দাবি জানান তারা। তাদের ভাষ্য, তা না হলে ডিজিটাল রেকর্ডেও মালিকানা স্বত্বের সঠিকতা নির্ণয় করা সম্ভব হবে না। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ১৯২৭ সালে বন আইন পাসের পর থেকেই শুরু হয়েছে এই জটিলতা। 

প্রতিমাবংকী গ্রামের ভুক্তভোগী আবুল কাশেম শিকদার (৬৭) জানান, বন বিভাগ মৌখিক অভিযোগ করলেও রেকর্ডের কার্যক্রম বন্ধ বা বাতিল হয়ে যায়। কাজেই ডিজিটাল জরিপের আগে বন বিভাগের হয়রানি থেকে মুক্ত হতে হবে।

হাতীবান্ধা মৌজার জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ, হরতাল, গণঅনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছি। তৎকালীন ভূমিমন্ত্রীও (রেজাউল করিম হীরা) দাবি বাস্তবায়নের কথা দিয়েছিলেন। আমাদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে অনেকেই কথা দিয়েছেন; কিন্তু কেউ কথা রাখেননি।’

তালেপাবাদ মৌজার কিতাব আলী মুন্সীর (৬৯) ভাষ্য, তাদের বাপ-দাদারা এই মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন। তাদের কবরও মালিকানা জটিলতায় প্রশ্নবিদ্ধ। মরার আগে তাদের কবরের মাটির মালিকানা স্বত্ব নিশ্চিত করা যাবে কিনা অনিশ্চিত।

বহুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সরকার নুরে আলম মুক্তার দাবি, পুরোনো ঘর ভেঙে সংস্কার করলেও বন বিভাগকে টাকা গুনতে হয়। বন বিভাগের আপত্তির কারণে ২০০৬ সাল থেকে এসব ভূমির খাজনা নিচ্ছে না স্থানীয় ভূমি অফিস। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা ফকির শামসুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে বৈধ দখল অনুযায়ী হাল খতিয়ানের ভিত্তিতে খাজনা আদায় করা যাবে। তবে জটিলতা নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মঞ্জুরুল মোর্শেদ জানান, উপজেলার ৬১টি মৌজাতেই ভূমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতা। এ জটিলতার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়া চলমান।

জানতে চাইলে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য বীব মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘ভূমির জটিলতা নিরসনে সংসদে একাধিকবার বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই সমাধান আসবে।’

টিএইচ