মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল মাগুরার পশুর হাট

মাগুরা প্রতিনিধি

দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল মাগুরার পশুর হাট

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে মাগুরার বৃহৎ পশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠলেও ভর করেছে দালাল চক্রের ত্রাস। জেলার অন্যতম বড় হাট কাটাখালীতে এখন পশু বেচাকেনা নয়, আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। এই চক্রের কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা, ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

বিক্রেতার ক্ষোভ, ক্রেতার হতাশা স্থানীয় খামারি রবিউল ইসলাম জানান, তিনটি গরু নিয়ে হাটে এলেও নিজের ইচ্ছেমতো দাম বলতে পারিনি। দালালরা জোর করে গরু কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। বেশি দাম বললেই হুমকি দেয়, কেউ কিনবে না।

একইভাবে ভুক্তভোগী আলোমখালী হাট থেকে আসা এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, গরুর দাম জানতে চাওয়ায় কয়েকজন দালাল ঘিরে ধরে। বলে, এটাই বাজারদর, কমে পাওয়া যাবে না। অথচ অন্য জায়গায় একই গরু অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

প্রশাসনের নজরদারি নেই, কমিটির অসহায়ত্ব স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি না থাকায় হাটটি কার্যত দালালনির্ভর হয়ে উঠেছে। প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাটে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অতিরিক্ত নজরদারির পরিকল্পনা চলছে। হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য আলম বলেন, আমরা সমস্যার কথা জানি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাস্তবতায় এসব প্রতিশ্রুতি মিলছে না। হাটজুড়ে চলছে দালালদের রাজত্ব।

হাটের রাজস্ব ও মালিকের বক্তব্য মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গত বছর কাটাখালী হাটের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৫ লাখ টাকা। এবার হাটটি বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। হাট ব্যবস্থাপনায় শতকরা ৩% হারে খাজনা আদায়ের অনুমোদন চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা এখনও অনুমোদনাধীন।

হাট মালিক মোহন মোল্লা বলেন, স্বৈরাচার সরকারের আমলে জোরপূর্বক ৪১ লাখ টাকা দিয়ে হাট কিনেছিলাম। এবার ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। গরুপ্রতি ৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছি।

সরকার নির্ধারিত কোনো রেট চার্ট আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এখনও পাইনি। অতিরিক্ত দালালের বিষয়ে তিনি জানান, সব তো পরিচিত লোক, কিছু করার নেই। স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার দাবি সচেতন মহল মনে করছে, দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে আলাদা তদারকি দল গঠন ও কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি।

জেলার অন্য হাটেও একই চিত্র মাগুরা জেলার উল্লেখযোগ্য পশুর হাটগুলো হলো্তশত্রুজিৎপুর, রামনগর, আলোমখালী, বেথুলিয়া, কাটাখালী, আলোকদিয়া, সীমাখালি, শালিখা ও শ্রীপুর সারঙ্গদিয়া। এসব হাটেও একই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদের আগমুহূর্তে এমন বিশৃঙ্খল হাট ব্যবস্থাপনা না বদলালে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খামারি ও ক্রেতা দুই পক্ষই। বাজারে স্বচ্ছতা ফেরাতে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, নয়তো ভবিষ্যতে এসব পশুর হাটে লেনদেন হয়ে উঠবে দুঃস্বপ্নের মতো।

টিএইচ