নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হলেও হাটে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। তবে ধানের দর কমলেও বাড়তি চালের দাম। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জোটবদ্ধ সিন্ডিকেট চাষিদের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষক নেতাদের।
নওগাঁর বরেন্দ্রর মাঠে এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ধান বিক্রি করতে এখন প্রতিদিন হাটে তুলছেন কৃষকরা। সকাল থেকে জমজমাট নওগাঁর মহাদেবপুর হাট। সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে এ হাটে মণ প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কম দরে ধান কিনছেন ব্যবসায়ীরা। ধানের দর কমানোর নানা অজুহাত থাকলেও উল্টো চিত্র চালের মোকামে।
হাটে কেনা ধান মিলে নেয়ার পর তৈরি চালের ক্ষেত্রে নানা রকমভেদ হয়। প্রতি কেজি ধান থেকে চালে ফারাক তৈরি হয় ৮ থেকে ১০ টাকা। চাষিদের অভিযোগ ৮ থেকে ১০ টাকার এই পুরো মুনাফা চলে যায় ব্যবসায়ীর পকেটে।
নওগাঁর বক্তারপুর এলাকার চাষী জুলফিকার, শহিদুল ইসলামসহ বেশ কজন জানান, এবার খুব ভালো ফলন হয়েছে। কিন্ত হাটে নেয়ার পর সঠিক দর পাচ্ছি না ।
হাটে সরু জাতের ধান, কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল প্রতিমণ সর্বোচ্চ ১২শ ৫০ থেকে ১২৮০ আর চিকন সুগন্ধি ১৩০০ টাকা মণ দরে কিনছেন মিলাররা। ৪০ কেজি ধান থেকে ২৫ থেকে ২৬ কেজি চাল হয়। উৎপাদনসহ সবখরচ বাদ দিয়ে সরুচাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা পড়ে। কিন্তু বাজারে এসব চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে মিলাররা। জোটবদ্ধ কারবারে চাষিদের ঠকানোর অভিযোগ উঠলেও ব্যবসায়ী নেতারা তা মানতে নারাজ।
জেলা অটোমিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ধানের বাজার এখন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দখলে তাই তারা কিছুই করতে পারছে না।
দফায় দফায় উৎপাদন খরচ বাড়ানো হলেও কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে টেকসই বাজার ব্যবস্থা না থাকায় ধান চাল কারবার সারাবছর ব্যবসায়ীদের দখলে থাকছে বলে দাবি কৃষক নেতাদের। নওগাঁ আহ্বায়ক জেলা বাসদ মো. জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, যেখানে ধান গবেষণা বলছে উৎপাদন প্রতিকেজি ৩১ টাকা সেখানে সরকার ৩০ টাকা দর দেয় কিভাবে। এটা ঠিক হয়নি।
এদিকে ৭ মে থেকে সরকারি গুদামে ধান চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এবার ধানের দাম ২৮ থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হলেও ধান দিতে কৃষকের সাড়া পাচ্ছে না খাদ্যবিভাগ। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্ম্দ তানভির আলম জানান, এবার আশা করা হচ্ছে চাষীদের ধান কিনতে সারা পাওয়া যাবে। কারণ গতবারের চেয়ে ২ টাকা দর বাড়ানো হয়েছে।
এবার নওগাঁর বরেন্দ্রর মাঠ থেকে প্রায় ১২ লাখ টন ধান কৃষকের ঘরে উঠে। এসব ধান চাল কারবার করে থাকে ৫টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ৫৬টি অটো ও সাড়ে ৩শ হাসকিং মিল।
জেলার হাটে প্রতিমণ ধান কেনা হচ্ছে, জিরাশাল ১২শ ৫০ টাকা, কাটারি ১২শ ৬০ টাকা, সুবলতা ১১শ টাকা, বিধান ৯০, ১২৮০টাকা হাইব্রিড ৯৫০ টাকা।
টিএইচ