রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
The Daily Post
‘নৌকার বিকল্প নাই- নাগরপুরের সন্তান চাই’

নাগরপুরে এমপির সঙ্গে দলীয় কোন্দার প্রকাশ্যে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

নাগরপুরে এমপির সঙ্গে দলীয় কোন্দার প্রকাশ্যে

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু ও নাগরপুর উপজেলা আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। 

এমপি আহসানুল ইসলাম টিটুর বিরুদ্ধে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিরা একাট্টা হয়েছেন। নাগরপুরের মাঠ-ঘাট, চা-স্টল, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আওয়ামী রাজনৈতিক অঙ্গণের সবার মুখে মুখে ‘নৌকার বিকল্প নাই- নাগরপুরের সন্তান চাই’ স্লোগানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

জানাগেছে, নানা বিষয় নিয়ে স্থানীয় এমপির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চলছিল। কিন্তু নাগরপুর কলেজ মাঠে গত রোববার জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। 

স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে ওই জনসমাবেশের আয়োজন করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি এবং জেলার পাঁচজন দলীয় এমপির উপস্থিতিতে ওই জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ওই দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নি। সাধারণ সম্পাদক কুদরত আলী সভা পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেন নি। স্থানীয় এমপি আয়োজিত ওই জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান আনিছ। 

সঞ্চালনা করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম দুলাল। ১ থেকে ৮ নম্বর সহ-সভাপতি এবং দুই জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকও সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন। তারা দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী।

সরেজমিনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানায়, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের এমপি আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে সেই দ্বন্দ্ব এখন ‘তপ্ত কড়াইয়ে ঘি’ ঢালার অবস্থা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস খান হিমু ও ইনসাফ আলী ওসমানী, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম উইলিয়ামের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তারা সবাই একাট্টা হয়ে এমপি আহসানুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। 

এরমধ্যে এমপি আহসানুল ইসলাম টিটুর পৈত্রিক নিবাস মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। তিনি মাতুলালয়ের জন্মসূত্রে নাগরপুরের গয়হাটার বাসিন্দা। অন্যরা সবাই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। এজন্যই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তৃণমূলে এমপি পদে ‘নৌকার বিকল্প নাই- নাগরপুরের সন্তান চাই’ স্লোগানটি ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস পেয়েছেন।

দুই পক্ষের ওই দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় দলীয় কর্মসূচি এমপি তার নিজের অনুসারীদের নিয়ে পালন করেন। অন্যরা উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নাগরপুরে জনসমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সমাবেশ করার জন্য প্রস্তাব দেন। তারা এই প্রস্তাবের কথা আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানান। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের ২ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাজমুল হক তপন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক বিএমএম জহুরুল আমিন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক দিলদার আহাম্মেদ, দপ্তর সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহালম মিয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খালিদ হোসেন জানান, ওই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে স্থানীয় এমপি কৃষিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে ১৭ সেপ্টেম্বর সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করেন। তিনি কারও সঙ্গে সমন্বয় না করে একাই সমাবেশের প্রচারণা শুরু করেন। তখন অন্য সবাই এ সমাবেশ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন।

এমপি ১৭ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ সফল করার জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর নাগরপুর উপজেলা পরিষদের হলরুমে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এমপি ঘরানার স্বল্প সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতা সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায়ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর সহ-সভাপতি সভাপত্বি করেন। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ধারণা করেছিলেন- প্রস্তুতি সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমপি উদ্ভুত পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধান করবেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও গুঞ্জন ওঠেছিল- সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাগরপুরের উপজেলা আওয়ামী লীগ, সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী  নেতা ও এমপির মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান হবে। সবাই একতাবদ্ধ হয়ে জনসমাবেশে অংশ নেবেন। কিন্তু তা না হয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে আরও তীব্র হল।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরত আলী জানান, এমপির নেতৃত্বে গত রোববার যে সমাবেশ হয়েছে তার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই। তিনি কারও সঙ্গে সমন্বয় করেননি। এমপি হওয়ার পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের এড়িয়ে চলতে থাকেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের লোকদের বগলদাবা করে রাজনীতি করছেন। কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে তিনি এই সমাবেশ করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে সমাবেশ করবেন বলেও তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে আহসানুল ইসলাম টিটুর অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম খান অপু জানান, গত রোববারের সমাবেশ যারা বয়কট করেছেন- তারা দলীয় শৃঙ্খলা মানেন নাই। এমপি সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করতে চান। কিন্তু যারা সমাবেশে আসেন নি, তারা কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং জেলা আওয়ামী লীগকে অবজ্ঞা করেছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস খান হিমু জানান, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে আওয়ামী লীগ আর সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাবে এমপি। 

কিন্তু আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় না করে ইচ্ছে মতো কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে সকল কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। গত রোববারের জনসমাবেশটিও উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে আয়োজন করায় কৃষিমন্ত্রী উপস্থিত থাকার পরও তিনি এবং তারা সমাবেশ মঞ্চে বসতে পারেন নি। নাগরপুর সরকারি কলেজ মাঠে গত রোববার বিকালের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। 

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ছানোয়ার হোসেন এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ এমপি, সদস্য মোহাম্মদ হাসান ইমান খান সোহেল হাজারি এমপি, সদস্য আতাউর রহমান খান এমপি, সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি প্রমুখ।

টিএইচ