মাদারীপুর সদর উপজেলা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন পলিথিন ও পাটখড়ির আদলে আবদ্ধ। ইট-বালু খুঁটির ওপর লোহার সঙ্গে থাকা টিন মরিচা ধরে খসে পড়ায় ঘর থেকেই আকাশ দেখা যায়। কোনো মতে পাটখড়ি ও পলিথিনের জোড়াতালি দিয়ে থাকছেন বসবাসকারীরা। ব্যারাকগুলো দ্রুত মেরামত করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের লোকজনেরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
আর সদর উপজেলা প্রশাসন বলছে, অর্থ পেলে সংস্কার করা হবে জরাজীর্ণ ঘরগুলো। আপাতত তেমন কিছুই করার নেই বলে দাবি সদর ইউএনও ওয়াদিয়া শাবাবের। আর অসহায় পরিবারগুলোর দাবি, এ বর্ষার আগেই অন্তত ঘরের টিনগুলো পরিবর্তন করার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মনি ফকির জায়গা-জমি না থাকায় গেলো ২০০৭ সঙ্গে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে সরকারি ঘরে। সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের চর দক্ষিণপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে নির্মিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেই কেটেছে তার পরিবারের ১৮টি বছর। তবে বর্তমানে আশ্রয়ণের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
পাকা মেঝে ভেঙে গেছে। টিনের চালা মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। লোহার অন্য সরঞ্জামেও মরিচা ধরেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ফুটো চাল চুঁইয়ে পানি পড়ে। তাই বৃষ্টির দিনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় মনি ফকিরের পরিবারকে।
অন্যঘরে ৭০ ঊর্ধ্ব ফুলমতির ঘরের একই অবস্থা। রাতের বৃষ্টিতে ঘরের মেঝেতে পুরো কাঁদা হয়ে গেছে। তাই রোদ উঠায় ঘরের টুকিটাকি জিনিসপত্র বাহিরে শুকাতে দিয়েছে। এমন কোন ঘর নেই যে, বৃষ্টি হলে ঘরে পানি না পড়ে। তাই কেউ কেউ ঘরের চালার সঙ্গে পলিথিন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করেছে। ফুলমতির ঘরের মতো প্রায় সবারই একই অবস্থা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নেয়া লোকজন জানান, শুধু মনি ফকির আর ফুলমতির ঘরই নয়, এই প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছে ৯০টি পরিবার। সংস্কারের অভাবে এ ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে বসবাসকারী পরিবারগুলোর। তাদের দাবি, ভাঙাচোরা ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে ফুটো বন্ধ করে কোনো রকম বসবাস করে আসছেন। অন্যত্র সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ও অস্বাস্থ্যকর এ ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস করছে এসব পরিবার।
তবে শিগগিরই কোনো সুসংবাদ দিতে পারেনি সদর উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অর্থের বরাদ্দ পেলেই সংস্কার করা হবে আশ্রয়ণের ঘরগুলো, এমনটারই আশ্বাস দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব। তিনি বলেন, আমি কুনিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো পরিদর্শন করে এসেছি।
আপাতত এসব ঘরের জন্যে কোন বরাদ্দ নেই। উপরে মহলে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা রাখি কিছু দিনের মধ্যেই টাকা বরাদ্দ পেলে ঘরগুলো মেরামত করা যাবে। যদি দু-চারটা ঘরের টিন নষ্ট হতো, তাহলে আমিই ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু ওখানের প্রায় সব ঘরেরই একই অবস্থা। তাই কিছুটা সময় লাগবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে কবরস্থান, খেলার মাঠ, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ ৯টি টিনের ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে রয়েছে ১০টি করে কক্ষ। আবাসিক জমিসহ প্রতিটি ভূমিহীন ৯০টি পরিবারকে একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়। যেখানে ১২টি শৌচাগার ও চারটি গোসলখানা করা হয়েছিল।
টিএইচ