রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫
ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Post

মেঘনার নদীভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহীন

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

মেঘনার নদীভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহীন

কখন যেন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতভিটা। প্রতি বছর বর্ষা এলেই শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক। ২০২০ সাল থেকেই উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী প্রায় শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে স্থানীয় শ্মশান, গোরস্থান, চকবাজার, বসতভিটাসহ শতাধিক স্থাপনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতা আর প্রশাসনের পরিদর্শন ও আশ্বাসেই কেটেছে গত পাঁচ বছর! অচিরেই এই ভাঙন রোধ না করা গেলে শত বছরের পুরোনো চকবাজারের দোকান ও স্থানীয়দের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে স্থানীয় লোকজনকে।

সর্বশেষ নদীভাঙন রোধে গত ১২ ফেব্রুয়ারি এলাকাবাসীর পক্ষে চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট নদীভাঙন রোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণের জন্য লিখিত আবেদন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীর অপরপাশে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের নোয়াগাঁয়ে মেঘনা নদী দখল করে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন স্থানীয় আ.লীগ ওয়ার্ড সভাপতি জাহের মিয়া। সেই ইটভাটার ইটের টুকরো নদীর পাড়ে ফেলায় মেঘনা নদীর পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি পরিবর্তিত হয়ে নদীর অপর পাশে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চাতলপাড় ইউনিয়নের চকবাজার সংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। জানা যায়, জাহের মিয়া স্থানীয় ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি ছিলেন। সে কারণে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার ফলে কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।

গত ৫ আগস্ট বিগত আওয়ামী সরকারের পতনের পরপরই জাহের মিয়ার ওই ইটভাটাটি ভেঙে ফেলা হয়। তবে নদীতে সৃষ্ট চর থাকার কারণে ভাঙন দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি দ্রুত নদীর চর কাটা প্রয়োজন। এতে যেমন ভাঙন রোধ হবে, তেমনি নদী ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক গতিপথ।

সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে জানা যায়, মেঘনা তীরবর্তী শত বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী চাতলপাড় বাজার, চাতলপাড়-চকবাজার, বিভিন্ন মসজিদ, মন্দিরসহ এলাকার একটি বিশাল অংশ বিলীনের আশঙ্কায় রয়েছে। উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রাম, চকবাজার, চাতলপাড় বড়বাজার ও বিলেরপাড়ের শতাধিক দোকান, ফসলি জমি ও বাড়িঘর ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী ভলাকুট ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও বালিখোলার কিছু অংশও মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাড়িঘর হারিয়ে কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে শ্মশান, গোরস্থান, চকবাজার, বসতভিটাসহ শতাধিক স্থাপনা।

এ বিষয়ে চাতলপাড় চকবাজার কমিটির সহ-সভাপতি নোয়াব আলী বলেন, ১০/১২ গ্রামের মানুষ এ বাজারের উপর নির্ভরশীল। নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই এই বাজারটি বিলীন হয়ে যাবে। বাজারের অনেকের দোকানপাট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

নদীভাঙন বিষয়ে স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম বলেন, আর কত বিলীন হলে সরকারের টনক নড়বে! স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য গত পাঁচ বছর ধরে শুধু পরিদর্শন আর আশ্বাসই দেখে আসছি।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলম বলেন, নদীর অপরপাশে চর জাগায় পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে নদীভাঙন রোধে দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান জানান, আশা করছি নদীভাঙন রোধে আগামী সপ্তাহ থেকেই অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু করতে পারবো। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। প্রকল্পটি পাস হলেই স্থায়ীভাবে কাজ শুরু হবে।

টিএইচ