বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
The Daily Post

যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে পুলিশে সোপর্দ

যবিপ্রবি প্রতিনিধি 

যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে পুলিশে সোপর্দ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করা, নিষিদ্ধ সংগঠন যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে ক্যাম্পাসে  হামলার পরিকল্পনা ও ছাত্রলীগ পুনর্বাসন করার অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে সোপর্দ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের ফোনে প্রায় ২০টির মতো আইডি থেকে নানা ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার প্রমাণ পান তারা।

আটক হওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন, ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ওই বিভাগের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাইম আশরাফি সজীব এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ রায়হান।

রোববার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, গত শনিবার দিবাগত রাতে রিয়াদ রায়হানের আচরণ সন্দেহজনক দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তার ফোন চেক করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করা, কিছু শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনাসহ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের প্রমাণ পান তারা। তার মোবাইলের মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখেন আরেক ছাত্রলীগ নেতা নাইম আশরাফীর সঙ্গে ক্যাম্পাস নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথোপকথন।

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ওই ছাত্রলীগ নেতাকেও ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তখন তারা ক্যাম্পাস নিয়ে নানা পরিকল্পনা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে স্বীকারোক্তি দেন। ক্যাম্পাস নিয়ে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে পিটিআর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফিরোজ কবির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা, ছাত্রলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম সাগরসহ পিইএসএস বিভাগ ছাত্রলীগের অনেকেই জড়িত থাকার প্রমাণ পান শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও তারা বিভিন্ন ফেক আইডি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হুমকি প্রদান করেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের পুলিশে সোপর্দ করেন তারা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াদ রায়হান তার স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আমি ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে আন্দোলন করি। জুলাই পরবর্তী সময়ে আবার তাদের কয়েকজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কথা বলি।

বেশ কয়েকজন ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কাজ শুরু করতে চায় বিশেষ করে জহিরুল ইসলাম সাগর, মোহাম্মদ রাফি, নাইম আশরাফি সজীবসহ ওদের অনুসারী কয়েকজন। ফেক আইডি খুলে পোস্টের জন্য হুমকির জন্য আমি ক্ষমা চাই। আপনারা ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করবেন না যারা আগে করতেন তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের কাজ করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করবেন না। আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম ছাত্রলীগের যবিপ্রবি শাখার সভাপতি সোহেল রানাসহ কারো সঙ্গে আর কথা বলবো না বা কোনো পরিকল্পনা করবো না।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেক পেজ, এমনকি ছাত্রলীগের পেজের মাধ্যমে হুমকি আসে। পরে আমরা জানতে পারি ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে কতিপয় ছাত্রলীগ কর্মী। তারা কিছুদিন ধরে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির গোপন চেষ্টা চালাচ্ছিল।

গত শনিবার রাতে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী দুই সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেন। পরে তাদের কাছ থেকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনার নানা প্রমাণ মেলে। শিক্ষার্থীরা সেই প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রশাসনের সহায়তায় তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. রাফিউল হাসান বলেন, রোববার (১৭ আগস্ট) যে দুজনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয় তাদেরকে সব প্রকার মব জাস্টিস থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল বডির মাধ্যমে লিখিতভাবে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. উমর ফারুক বলেন, আমরা কিছু শিক্ষার্থীর মাধ্যমে জানতে পারি একজন ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে পারে এমন কিছু তথ্য আদান-প্রদান করছে। তখন ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত হয়। পরে তার মোবাইলের সূত্র ধরে আমরা আরেকজনকে ধরতে সক্ষম হই। পরবর্তীতে তাদেরকে লিখিতভাবে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

যশোর কোতয়ালী থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, আটক দুজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। পরবর্তীতে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

টিএইচ