সীমান্ত নিয়ে পুরোনো বিরোধের জেরে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়া।
আজ শুক্রবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গোলাগুলিতে অন্তত ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক আহ্বান সত্ত্বেও সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ নেই।
থাই সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোরের আগেই উবন রাতচাথানি ও সুরিন প্রদেশজুড়ে গোলাগুলি শুরু হয়। কাম্বোডিয়ান সেনারা রুশ উৎপাদিত বিএম-২১ রকেট লঞ্চার ও ভারী কামান ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ তাদের। সংঘর্ষ-আক্রান্ত থাই এলাকাগুলো থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষকে।
থাই সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘কাম্বোডিয়া ধারাবাহিকভাবে ভারী গোলাবর্ষণ চালিয়েছে—ব্যবহার করেছে কামান, ফিল্ড আর্টিলারি ও বিএম-২১ রকেট ব্যবস্থা। থাই বাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী জবাব দিয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সীমান্তের একটি বিতর্কিত এলাকায় গোলাগুলি শুরু হয় হালকা অস্ত্র দিয়ে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ছয়টি ভিন্ন স্থানে। দুই দেশই পরস্পরকে সংঘর্ষ শুরুর জন্য দায়ী করছে। এই অঞ্চলে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধ চলছে।
থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশ থেকে রয়টার্সের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার সেখানে বারবার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কৃষিপ্রধান এলাকাটিতে এখন রাজপথজুড়ে থাই সেনাদের অবস্থান দৃশ্যমান।
এদিকে একাধিক ট্রাক, সাঁজোয়া যান ও ট্যাংক নিয়ে থাই সামরিক কনভয় সীমান্তের দিকে এগিয়ে যায়। এসব বাহন ধানখেত ঘেরা প্রাদেশিক সড়ক ধরে গন্তব্যে পৌঁছায়।
গত বুধবার রাতে থাইল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রদূতকে নমপেন থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একইসঙ্গে কাম্বোডিয়ার দূতকে বহিষ্কার করে। পরদিন সকালে সংঘর্ষ শুরু হয়। থাই পক্ষ দাবি করেছে, তাদের একজন সেনা সদ্য পুঁতে রাখা একটি ভূমিমাইনের বিস্ফোরণে পা হারান। এই মাইন তারা কাম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী পুঁতে রেখেছিল বলে অভিযোগ করে, যদিও নমপেন এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪ জনই সাধারণ মানুষ। আহত হয়েছেন ৪৬ জন, যার মধ্যে ১৫ জন সেনা সদস্য।
অন্যদিকে, কাম্বোডিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার হতাহত বা সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। একজন সরকারি মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কাম্বোডিয়ার ওদার মিনচেই প্রদেশ প্রশাসনের মুখপাত্র মেথ মিয়াস ফিয়াকডি জানান, সেখানে এক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন পাঁচজন। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পরিবারকে।
গতকাল থাইল্যান্ড বিরল পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রাখে, এর মধ্যে একটি থেকে কাম্বোডিয়ার একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। কাম্বোডিয়া একে ‘বেপরোয়া ও নির্মম সামরিক আগ্রাসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসএস জানিয়েছে, এফ-১৬ ব্যবহারের মাধ্যমে থাইল্যান্ড তার সামরিক ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। তাদের রয়েছে আধুনিক যুদ্ধবিমান ও সমরাস্ত্র, যা কাম্বোডিয়ার তুলনায় অনেক বেশি। কাম্বোডিয়ার কোনো যুদ্ধবিমান নেই বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
থাইল্যান্ডের দীর্ঘকালীন মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে অবিলম্বে সংঘর্ষ থামানো, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে।
আসিয়ান জোটের বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল রাতে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় আনোয়ার লেখেন, ‘ব্যাংকক ও নমপেন শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে যে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে, আমি তা স্বাগত জানাই। আসিয়ান পরিবারের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
টিএইচ