রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
The Daily Post
জনবল ও সরঞ্জাম সংকট

সালথা হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত রোগী

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি 

সালথা হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত রোগী

প্রজ্ঞাপন মূলে ২০০৬ সালে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মোট ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে সালথা উপজেলা গঠিত হয়। ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে সালথা উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। 

পরে জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে বালিয়া গট্টি এলাকায় ১ একর জায়গার ওপর তিনটি প্যাকেজে মোট ১৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যয়ে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫টি ভবনের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৫০ শয্যা এই হাসপাতালের কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়ার পর প্রায় দুই বছর কোনো ধরনের কার্যক্রম চালু ছিল না।

তবে ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে তড়িঘড়ি করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম কোনো রকম চালু হয়। বর্তমানে সালথার প্রায় দুই লাখ জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি। কিন্তু হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবল ও উপকরণ সংকট রয়েছে। 

তাছাড়া হাসপাতালের কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অন্তঃবিভাগ জনবলের পদ সৃজন প্রয়োজন। তন্মধ্যে শুধুমাত্র বহির্বিভাগ জনবলের পদ সৃজন করা হলেও বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় জনজগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। 

অন্যদিকে সালথা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও প্রচুর জনবল সংকটের কারণে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এতে সালথার তৃণমূলপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মান ভেঙে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় রোগীদের ভরসা গ্রাম্য চিকিৎসক। 

রোগীদের অবস্থা অবনতি হলে যেতে হচ্ছে জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় চিকিৎসাসেবা নিয়ে চরম বিপাকে দিনপার করেছিল এখানকার সাধারন মানুষ। বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ে একই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে তারা। 

এমন অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে জনবল সংকট সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮৬টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩৪টি পদ। প্রথম শ্রেণির মোট ৯টি পদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ বাদে সবগুলো পদ শূন্য। 

এরমধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট ৪টি পদ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১টি পদ, সহকারী সার্জন ২টি পদ ও ডেন্টাল সার্জন ১টি পদ সেই প্রথম থেকেই শূন্য। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট ৭৭টি পদের জনবল থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ পদ এখনো সৃজন হয়নি। এখানে সৃজন হয়নি কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সুইপার, আয়া, ওয়ার্ডবয়, বাবুর্চি/কুক মশালচি ও নিরাপত্তাপ্রহরী। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য এসব পদে জনবল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে ২৬টি পদ সৃজন হলেও অধিকাংশ পদ রয়েছে জনবল শূন্য।

শূন্য পদগুলো হলো— উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ২ জন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ল্যাব) একজন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান  রেডিও) একজন, ক্যাশিয়ার একজন, অফিস সহকারী কাম ডাটাএন্টি অপারেটর দুজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক দুজন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পাঁচজন, স্বাস্থ্য সহকারী, ছয়জন, টিকেট ক্লার্ক একজন, কার্ডিওগ্রাফার একজন, ড্রাইভার একজন, জুনিয়র মেকানিক একজন, অফিস সহায়ক দুজন। এ ছাড়া ২৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে ৮ জন প্রেষণে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ও একজন টিবি ক্লিনিকে কর্মরত রয়েছে। 

সমপ্রতি সারা দেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রায় ৫০০ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ হলেও একজন ফার্মাসিস্ট ব্যতিত অন্য কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে পদায়ন হয়নি সালথার এই হাসপাতালে। ফলে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চালু করা যাচ্ছে না এক্সরে-প্যাথলজির মতো মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। যে কারণে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জনসাধারণকে প্রাইভেট ক্লিনিকের দ্বারস্ত হতে হচ্ছে। এতে জনসাধারণের গুনতে হচ্ছে বিপুল অর্থ। সেই সাথে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব।

অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ২২টি পদের মধ্যে ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে। ৮টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৭টিতেও মেডিকেল অফিসার নেই। ফলে প্রতিনিয়ত সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাম এলাকার অসহায়-অসচ্ছল মানুষ।

উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দা রকিবুল হাসান, হাফিজুর ও লাবলী বেগম বলেন, আমরা শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে গেলে অনেক সময় সেখানে কাউকে পাওয়া যায় না। আবার মাঝে মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকলেও কোনো চিকিৎসা কর্মকর্তা পাই না। পরে ভিজিটরকে দিয়ে দেখাই। তারা অনেক সময় না বুঝে বা রোগ নির্ণয় না করে উল্টাপাল্টা ওষুধ দিয়ে দেয়। 

আবার আমাদের বড় কোনো রোগ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখান থেকে পরামর্শ দেয়া হয় ফরিদপুর শহরের হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লোকজন কম আবার যন্ত্রপাতিও নেই। এমন অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে জনবল সংকট সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর দাবি জানান তারা।

সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আব্দুল মমিন বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও অন্তঃবিভাগের জনবলের পদ সৃজনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ছাড়া হাসপাতালের জনবল সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগ প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ জন রোগীকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জরুরি বিভাগেও দৈনিক প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। 

অন্তঃবিভাগ চালু না থাকলেও এই ডেঙ্গুকালীন সময়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগীকে ডে-কেয়ার বেসিসে স্যালাইনসহ অন্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এতে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হলেও কিছু সংখ্যক ভর্তিযোগ্য রোগীকে পাঠাতে হচ্ছে জেলা শহরের হাসাপাতালগুলোতে। অন্তঃবিভাগ চালু করা গেলে বেশির ভাগ রোগীকেই এই হাসাপাতাল থেকেই পরিপূর্ণ সুস্থ করে বাড়িতে পাঠানো সম্ভব।

টিএইচ