সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Post

৭ জেলায় বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ জেলায় বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু

সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে গত রোববার ও সোমবার (২৮ এপ্রিল) ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় ৪ জন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে ৩ জন, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও মদনে ২ জন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজন, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে একজন, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় একজন এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় একজন মারা গেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠনো খবর—

কুমিল্লা : কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বরুড়ায় দুই স্কুল ছাত্র এবং মুরাদনগরে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। সোমবার (২৮ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন এবং বিল্লাল হোসেন ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ দুপুরে হালকা বৃষ্টির মধ্যে মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। অপর ঘটনায় মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকায় বজ্রপাতে দুই কৃষক মারা গেছেন। স্থানীয়রা বলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পশ্চিম পাড়ার মৃত বীর চরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ ও উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হন আরও ২ ব্যক্তি। বরুড়া থানার ওসি নাজমুল হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। পরিবারের কোনও অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি শিশু আহত হয়েছে। বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে দুজন কৃষক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে খয়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন ইন্দ্রজিৎ দাস ও স্বাধীন মিয়া। ইন্দ্রজিৎ উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে। স্বাধীনের বাবার নাম ইদ্রিস মিয়া; বাড়ি খয়েরপুর গ্রামে। এতে আহত হয়েছেন একজন।
এছাড়াও একই গ্রামের শ্রমিক সহোদর দাস বজ্রপাতে আহত হয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রায় একই সময়ে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে বজ্রপাতে ফুলেছা বেগম নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ওই এলাকার মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী। মিঠামইন থানার এসআই অর্পণ বিশ্বাস বলেন, সোমবার (২৮ এপ্রিল) বাড়ির পাশে ধানের খড় শুকাতে দিচ্ছিলেন ফুলেছা বেগম। এ সময় বজ্রপাত হলে নিহত হন তিনি।

নেত্রকোণা : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধনুন্দ গ্রামে নিজ বাড়িতে গত রোববার রাতে বজ্রপাতে আহত হন দিদারুল ইসলাম। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি পাশের খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় একটি ইফতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইউএনও ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের দাফনের জন্য পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) মদন উপজেলার তিয়োশ্রী গ্রামে মো. আরাফাত বাড়ি থেকে বের হয়ে মাদ্রাসার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ করে একটি বজ্রপাতে তার শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আরাফাত ওই গ্রামের সালাম মিয়ার ছেলে। সে তিয়োশ্রী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে সোমবার (২৮ এপ্রিল) বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রিমন আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা এবং শাল্লা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে গ্রামের পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন তালুকদার। একপর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। রিমন তালুকদার নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ওসি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হাওরে বজ্রপাতে দুর্বাসা দাস নামে এক ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। তাদের উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তি উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালাবাসী দাসের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বানিয়াচং থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা। জানা যায়, সকাল থেকেই উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের পূবের হাওরে ধান কাটছিলেন দুর্বাসা দাসসহ তার স্বজনরা। এসময় ঝড়ো বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে দুর্বাসা দাস বজ্রাঘাতের শিকার হন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এছাড়াও আহন হন তার ভাই ভূষণ দাস ও বোন সুধন্য দাস।
এদিকে একই উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া নামে এক শিশু বজ্রাঘাতে আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান বলেন, বজ্রাঘাতে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হবে।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে বিশাখা রানী নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিশাখা ওই এলাকার কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী। কচুয়া থানার ওসি আজিজুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজ জমি থেকে ধান তুলছিলেন। এ সময় কাছাকাছি কোথাও বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এ সময় বিশাখা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। বজ্রপাতের শব্দের কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে ঘটনাস্থলে মারা যান।

মৌলভীবাজার : বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান। উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বজ্রপাতে চা শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও এসেছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য নিহতের স্বজনরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবেন।

টিএইচ