আগামী ডিসেম্বরে মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়া সম্ভব হলেও অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাস পরেও নির্বাচন দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো দল তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার, দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচরের সময় আমরা দেখেছি— তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আদালত অবমাননা স্বৈরাচারের সময়ের পুনরাবৃত্তি বলে আমরা মনে করি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন না, তাদের প্রতি আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি। আমরা মনে করি, পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তিগত মানসিকতার সংস্কার জরুরি।
তিনি বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে বিএনপি সব কাজ করছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে কর্মপরিকল্পনা তুলে দিতে গত এক মাস বিভাগী শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। তার আগের দিন ভিন্ন মতাদর্শের তারুণ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে করেছে সেমিনার। কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে মতামত দিয়েছেন তারা।
কৃষকদের বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতার পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড দেওয়া হবে বলে জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও নবীনদের তারুণ্যকে সমন্বয়ক করে একাত্তর থেকে চব্বিশের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আর কথামালার রাজনীতি চলবে না। এখন করতে হবে দৃষ্টান্ত স্থাপন। নারী-পুরুষের জন্য কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগোতে চাই।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পরিবারের নারী প্রধানকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। প্রতিমাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযেগিতা করা হবে। এতে করে পরিবারগুলো কিছুটা স্বাবলম্বী হবে।
খেলাধুলাকে মূল পেশায় নিয়ে আশার জন্য চেষ্টা করবে বিএনপি। এ জন্য ক্রীড়াকে কারিকুলামে নিয়ে আসা হবে।
বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি অন্যন্য ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এতে করে আমাদের সন্তানরা বহির্বিশ্বে নিজেদের কাজে লাগবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা হবে। ই-কমার্সের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন সেক্টারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। তথ্য-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তোলা হবে। বিএনপি ই-কমার্স ও আইটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন করতে চায়। দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চায়। এ জন্য এক থেকে তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরকে সমন্বয়ে কাজ করছে বিএনপি। খাল খনন ও বৃক্ষ রোপণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতি পাঁচ বছরে ২৫-৩০ কোটি বৃক্ষ রোপণ করা হবে।
তারেক রহমান বলেন, উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান। জনগণই বিএনপির মূল ভিত্তি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন করবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ।
বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশ আয়োজন করে।
যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
টিএইচ