মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম, নারীর অধিকার, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কসহ সাতটি বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান তুলে ধরেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলো প্রকাশ করেন। এতে এনসিপির রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্য পরিস্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
নিচে বিষয়ভিত্তিকভাবে তা উপস্থাপন করা হলো
১. মুক্তিযুদ্ধ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরে এনসিপি বলেছে, ১৯৭১ সালের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা এনসিপির মূল চালিকাশক্তি। পাশাপাশি, উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিকতাকেও দলটি রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে।
২. ধর্ম ও সহাবস্থান
এনসিপি নাগরিকদের ধর্মবিশ্বাস ও আত্মিক অনুভবকে শ্রদ্ধা জানায়। দলটি ইসলাম ধর্মের নৈতিকতা ও মানবিকতা, বাঙালি মুসলমানের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনচর্চাকে মূল্যায়ন করে। একইসঙ্গে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনসিপি সেকুলারিজম বা ধর্মতন্ত্র কোনোটিকেই একক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে না; বরং ধর্মীয় সহাবস্থান ও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে অবস্থান নেয়।
৩. জাতীয় পরিচয় ও সংস্কৃতি
জাতি, ধর্ম বা গোত্রের ভিত্তিতে নয়, এনসিপি সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণ করে। বঙ্গীয় বদ্বীপ অঞ্চলের বহু ভাষা ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণকে ভিত্তি করে জাতীয় সংস্কৃতি গঠনের লক্ষ্য রয়েছে তাদের।
৪. নারীর মর্যাদা ও অধিকার
নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নকে এনসিপি অন্যতম মূলনীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে দলটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে। পাশাপাশি, পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।
৫. ভারত ও আঞ্চলিক রাজনীতি
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে এনসিপি। দলটি মনে করে, এটি বাংলাদেশের জন্য সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি। তাই ন্যায্যতা, মর্যাদা, সভ্যতা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে কৌশলগত বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ার পক্ষে দলটির অবস্থান।
৬. আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ও কল্যাণরাষ্ট্র
এনসিপি বৈষম্যহীন, ইনসাফভিত্তিক এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের কথা বলেছে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, নগর ব্যবস্থাপনা, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান হবে দলটির প্রধান নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র। বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন গড়ার পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে।
৭. রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও নতুন সংবিধান
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছে এনসিপি। এটি বাস্তবায়নকে দলটির প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
টিএইচ