শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Post

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া না থাকলে কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়বে : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া না থাকলে কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়বে : মির্জা ফখরুল

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া না থাকলে তিক্ততা সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। এই বোঝাপড়া না থাকলে রাজনীনিতে কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়বে। গণতন্ত্রের কাদা ছোড়াছুড়ি হবে। অনেক অনেক কথা আসবে। কিন্তু এটার একটা সীমা থাকা দরকার। তা না হলে একটা তিক্ততা সৃষ্টি হয়। যে তিক্ততা ভবিষ্যতে গিয়ে রাজনীতিকে আরো কলুষিত করে। আমি আশা করব, আমরা আগামী দিনে একটা সুন্দর বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

আজ বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার একটা নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি মনে-প্রাণে গণতন্ত্র বিশ্বাস করি। বিপ্লব যারা করবেন তারা বিপ্লবী দল করবেন, বিপ্লবী সংগঠন করবেন এবং বিপ্লব করে বিপ্লবী সরকার গঠন করে তারা দেশে বিপ্লবকে সফল করবে বলেও মনে করি।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকারে যাবো। জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ কাজগুলো করার চেষ্টা করব। তারপর আবার জনগণের কাছে ফিরে যাব, যদি তারা আমাকে গ্রহণ করেন, আমি আসব না হলে আসব না। সবার মতামতকে প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে, সবাইকেই তার কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, একজন সাধারণ মানুষের নায্যবিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে, সমাজে তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আজকে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই লিবারেল ডেমোক্রেসি একটু একটু করে এখন নিচে নেমে যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনমানসিকতা সবকিছু আস্তে আস্তে বদলায়। সে বদলানোর ফলে দেখা যায় যে চলমান রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন ছাড়া রাজনীতিকে ধরে রাখা কঠিন। সম্প্রতি আমি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে চীনে গিয়েছিলাম। যতবার চীনে যাই দেখি চীনের ভিন্ন চেহারা। চীন প্রতিদিন বদলাচ্ছে। আর তাদের সিস্টেমটা তো ভিন্ন। আমাদের সিস্টেম ভিন্ন। আবার দেখুন আমেরিকার রাজনৈতিক কাঠামো আর আমাদের কাঠামো কিন্তু এক নয়।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা প্রকৃতপক্ষে গোলামি থেকে মুক্তি পেয়েছি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ গোলামি থেকে। তারপরে পাকিস্তানি গোলামি শুরু হয়েছে। তারপরে আবার আপনার বাংলাদেশে প্রভুদের গোলামি শুরু হয়েছে। এই গোলামতেই আছি আমরা। গোলামদের কিন্তু একটা সংকীর্ণ মন তৈরি হয়। কিছুতেই খুব বেশি বড় করে দেখার সুযোগ হয় না। আমি মনে করি, আমাদের বড় করে দেখার চেষ্টা করা উচিত। আমরা একটা মুক্ত সমাজ চাই। আমরা একটা মুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই।

অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক বছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা তৈরি করতে না পারার সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, তারা এক বছরেও কী এদের খুঁজে পেলেন না? যারা এই দেশকে পরিবর্তনের জন্য প্রাণ দিলো, রক্ত দিলো তাদের জন্য একটা তালিকা তৈরি করে সঠিকভাবে তাদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করতে পারলেন না! দ্রুত একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত সরকারের কাছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তুলে দেয়ার আহ্বান জানান।

গণঅভ্যুত্থানে আহত সাভারের একটি শিশুর কৃত্রিম মাথা লাগানোর বিষয়টি উল্লেখ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কালকে সাত বছরে একটি শিশু এসে হঠাৎ করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। শিশুটি বলেছে আমার মাথায় খুলিটা নেই, খুলিটা প্লাস্টিকের। প্লাস্টিক দিয়ে আর্টিফিশিয়াল খুলি তৈরি করে লাগিয়ে দিয়েছে। এর চেয়ে বড় ত্যাগ আর কি হতে পারে? আমরা যদি সঠিকভাবে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে ওই শিশুদের সামনে, আমাদের বোন-মায়ের সাথে নিঃসন্দেহে একটা বড় প্রতারণা করব।

রাষ্ট্র সংস্কারে একটি মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হওয়াকে ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, মৌলিক বিষয়গুলো আছে, সেই বিষয়গুলো সমাধান করে দ্রুত নির্বাচনের একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হলে আমাদের মধ্যকার দ্বিধা কাটিয়ে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব।

বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হওয়ায় মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশ- এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে সনম্মনা দেয়া হয়। এদের মধ্যে মতিউর রহমান ও মাহমুদুর রহমানের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ভুইয়াসহ কমিটির সদস্যরা। বাকিরা বিদেশে এবং অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেনি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ।

টিএইচ