শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
ঢাকা শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২
The Daily Post

পাকিস্তানকে হারিয়ে ৩৪ বছর পর সিরিজ জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাকিস্তানকে হারিয়ে ৩৪ বছর পর সিরিজ জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

৩৪ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ত্রিনিদাদে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ২০২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে শাই হোপের দল।

ম্যাচে উইন্ডিজ ইনিংসে পাকিস্তান প্রথমে ভেবেছিল তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। শুরুতে ধীরগতির পিচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা ছন্দে আসতে পারছিল না, আর মোহাম্মদ রিজওয়ান সুযোগ নিয়ে পার্ট-টাইম বোলারদের দিয়ে ওভার করাচ্ছিলেন।

স্বাগতিকরা অতি রক্ষণাত্মক খেলছিল — যেন বড় স্কোর না হলেও অন্তত উইকেট হাতে রাখতে চায়। ৪৪তম ওভারের শুরুতেও তাদের রান ছিল ২০০-র নিচে। কিন্তু এক বলেই চিত্র পাল্টে যায় — মোহাম্মদ নওয়াজের প্রথম বলেই হোপ ছক্কা মারেন, তারপর পরের বলেও ছক্কা — আর তখন পাকিস্তান শুধু দেখছিল, কীভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়িয়ে একের পর এক আঘাত হানছে।

রিজওয়ান দ্রুতই আবরার আহমেদকে আক্রমণে আনেন, যিনি মাঝের ওভারগুলোতে দারুণ বল করে প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক তখন পুরোদমে চালিয়ে খেলতে থাকেন। আবরারের ওভারে ১৮ রান ওঠে। অন্যদিকে গ্রিভস হাসান আলিকে মারতে থাকেন।

নাসিম শাহ চেষ্টা করছিলেন পুরনো বল দিয়ে রিভার্স সুইং করতে, যা আগে রোস্টন চেজকে আউট করেছিল, কিন্তু হোপের সামনে তা কাজে লাগেনি। হোপ তীব্র কভার ড্রাইভে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে উঠে আসেন। তিনি ৯৪ বলে ১০টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১২০ রান করেন।

সেই ওভারেই ২১ রান ওঠে, আর ইনিংসের শেষ সাত ওভারে ১০০ রান আসে। হাসান আলিকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে ছক্কা মেরে হোপ ইনিংস শেষ করেন।

এরপর উইন্ডিজ পেসার সিলস পরের ৮.২ ওভারে আরও ভয়াবহ চিত্র আঁকেন। সিরিজে তৃতীয়বারের মতো সাইম আইয়ুবকে প্রথম ওভারেই আউট করেন। আব্দুল্লাহ শফিকও শূন্য রানে ফেরেন — মিড-অন দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন।

তবে সিলসের সবচেয়ে দারুণ উইকেট ছিল তৃতীয়টি — মোহাম্মদ রিজওয়ানকে আউট করা। রিজওয়ান হাঁটতে হাঁটতে বল ছেড়ে দেন, ভেবেছিলেন বল অফ স্টাম্পের বাইরের ছিল, কিন্তু বল ভেতরে ঢুকে অফ-বেইল ছুঁয়ে যায় — এত নিখুঁতভাবে বেইল ছিটকে পড়ে যেন কেউ নিজে হাতে তুলে রেখেছে।

পাকিস্তান তখন ভাবছিল কিভাবে ম্যাচটা বাঁচানো যায় — আর সব আশাই কেন্দ্রীভূত ছিল বাবর আজমকে ঘিরে। কিন্তু বাবরও সিলসের সামনে দাঁড়াতে পারেননি, এলবিডব্লিউ হন মাত্র কয়েক রানে, পাকিস্তান পড়ে যায় ২৩/৪ স্কোরে।

এরপর বাবর আউট হওয়ার পর যা হয়েছে, তাও তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সালমান আলি আগা ও হাসান নওয়াজ শুধু এক-দুই রান করে খেলছিলেন, যদিও তাতে রান রেট আরও বেড়ে যাচ্ছিল। পাকিস্তান তাদের দলে মূল বোলার বাদ দিয়ে ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে গিয়ে নিজেরাই বিপদ ডেকে আনে। তারা জানত, রান তাড়া সম্ভব নয়।

শেষপর্যন্ত গুডাকেশ মোটি ও রোস্টন চেজ স্পিনে উইকেট তুলে নেন। ম্যাচ শেষ করার জন্য ব্যাটন তুলে দেন সিলসের হাতে। তিনি নাসিম শাহ ও হাসান আলিকে ফেরান, এরপর আবরার আহমেদ একটি অসম্ভব রান নেওয়ার চেষ্টা করেন, আর চেজ সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে দেন। এতে সিলস ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগার গড়ার সুযোগ হারান। পাকিস্তানের হয়ে আগা ৩০, মোহাম্মদ নওয়াজ ২৩ ও হাসান নওয়াজ ১৩ রান করেন। বাকিদের কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি।

সিলস ৭.২ ওভারে ১৮ রানে ৬টি উইকেট নেন।

টিএইচ