রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Post

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, নতুন ব্যাখ্যায় নিহত ৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, নতুন ব্যাখ্যায় নিহত ৩৪

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে শুরু থেকেই কিছু বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে ২৪ জুলাই প্রকাশিত তালিকায় মৃতের সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৫। তবে ২৭ জুলাইয়ের হালনাগাদ তালিকায় সেটি সংশোধন করে ১৪ দেখানো হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ জন।

রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহত শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করলে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ফরেনসিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়।

সিএমএইচ সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুলাই দুর্ঘটনার পর মর্গে মোট ১৫টি বডি ব্যাগ গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তুরাগ থানা পুলিশ এই বডি ব্যাগগুলো থেকে ১১টি সম্পূর্ণ মৃতদেহ, ২টি অপূর্ণাঙ্গ মৃতদেহ এবং ৫টি বিচ্ছিন্ন দেহাংশ শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ৯টি মৃতদেহ স্বজনরা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করতে পারায় ৮টি ২১ জুলাই এবং ১টি ২২ জুলাই হস্তান্তর করা হয়।

অবশিষ্ট ২টি মৃতদেহ, ২টি অপূর্ণাঙ্গ মৃতদেহ ও ৫টি বিচ্ছিন্ন দেহাংশ নিয়ে শুরু হয় ফরেনসিক বিশ্লেষণ। ২২ জুলাই সিআইডির ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল ও সিএমএইচ থেকে ১৪টি নমুনা সংগ্রহ করে এবং ১১টি রেফারেন্স নমুনা নেয় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব বডি ব্যাগে ৫টি বিচ্ছিন্ন দেহাংশ ছিল, সেগুলো মূলত দুই শিক্ষার্থী—লামিয়া আক্তার সোনিয়া ও আফসানা আক্তার প্রিয়ার শরীরের অংশবিশেষ। ফলে সেগুলো পৃথক পাঁচজন নয়, বরং দুটি মৃতদেহ হিসেবেই গণ্য হয়।

এই ফরেনসিক ফলাফলের ভিত্তিতে সিএমএইচে সংরক্ষিত মৃতদেহের প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়ায় ৫টি। এর সঙ্গে আগে হস্তান্তর হওয়া ৯টি মৃতদেহ যোগ করে চূড়ান্ত সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪। ২৭ জুলাইয়ের হালনাগাদ তালিকায় সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি চিঠির মাধ্যমে সংশোধিত তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১২ জন ভুক্তভোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৮ জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং ৩৪ জন নিহত হয়েছেন।

বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত ও আহতদের সংখ্যা নিম্নরূপ

   জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট: ৬৬ জন ভর্তি, ১৭ জন মৃত্যু

   সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ): ১১ জন ভর্তি, ১৪ জন মৃত্যু

   ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ১ জন ভর্তি

   টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল: ১ জন মৃত্যু (অজ্ঞাতনামা)

   ইউনাইটেড হাসপাতাল: ১ জন মৃত্যু

   জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল: ১ জন মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পর প্রাপ্ত বিচ্ছিন্ন দেহাংশগুলো প্রাথমিকভাবে আলাদা মৃতদেহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। তবে ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, কিছু অংশ একই ব্যক্তির। এ কারণেই মৃতের সংখ্যায় পার্থক্য দেখা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনার ভয়াবহতা, দেহাবশেষের অপ্রতুলতা ও স্বজনদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মৃতের সংখ্যা নির্ধারণে সময় লেগেছে। তবে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, দুর্ঘটনায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৩৪ জন। এর মধ্যে সিএমএইচে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।

টিএইচ