মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

নেত্রকোণায় ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওযায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা

নেত্রকোণা প্রতিনিধি

নেত্রকোণায় ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওযায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা

সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে বিভিন্ন ঝামেলা এবং সিন্ডিকেটের কারণে নেত্রকোণার কৃষকরা স্থানীয় হাট বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা দেখা দিয়েছে।

নেত্রকোণা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১০ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। আগাম বন্যা বা কোন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয়ায় নেত্রকোণা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরাঞ্চলে এক সপ্তাহ আগে শতভাগ ধান কাটা শেষ হলেও উচু এলাকায় শুক্রবার (১৭ মে) পর্যন্ত ৯৫ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। 

জেলায় এবার প্রায় ১২ লাখ ২৮ হাজার ২২৩ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। প্রথম দিকে হাওরাঞ্চলে ধানের দাম মন প্রতি সাড়ে ৯শ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হলেও জেলায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে স্থানীয় সিন্ডিকেটের কারণে ধাপে ধাপে ধানের দাম কমতে শুরু করে। সরকার ৭মে থেকে অভ্যন্তরীন ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। 

প্রতিকেজি বোরো ধানের দাম ৩২ টাকা করে মণ প্রতি ১ হাজার ২৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ১৫মে পর্যন্ত কোন উপজেলায় এক ছটাক ধানও ক্রয় না করায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় হাট বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করছে। বর্তমানে কৃষকরা স্থান ভেদে ৭৩০ টাকা থেকে ৮শ টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। 

হাওরাঞ্চল ঘুরে বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ধান। এই ধান দিয়ে তাদের সারা বছরের খোরাকী, সংসার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, আচার-অনুষ্ঠান চলে। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেন। 

কৃষকরা যখন জমিতে ধান কাটা শুরু করে তখন মহাজনরা তাদের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকরা স্থানীয় ফাঁড়িয়াদের কাছে কম দামে বিক্রি করে মহাজনের ঋণ পরিশোধ করে। হাওরে ধান কাটা শেষ হওয়ার এক মাস পর সরকারিভাবে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হয়। সরকারি নির্দেশ মেনে কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অ্যাপসে নিবন্ধন, লটারি, আর্দ্রতা যাচাই, পরিবহন খরচসহ নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। ফলে কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করতে অনাগ্রহী পয়ে পড়ে। 

কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের কৃষক শফিকের অভিযোগ, গত বছর তিনি গুদামে ধান দিতে যান। কিন্তু সেখানে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। অ্যাপস, লটারির ঝামেলা ছাড়াও দুর্গম এলাকায় পাকা রাস্তাঘাট না থাকায় কষ্ট করে গুদামে ধান আনা, আর্দ্রতা যাচাইয়ের নামে হয়রানি, লেবার খরচের নামে বস্তা প্রতি টাকা দেয়া, কয়েক দিন ঘুরে চেক সংগ্রহ এসবের কারণে সরকারি গুদামে ধান বেচার আগ্রহ থাকে না কৃষকদের। তারা গ্রামে আগত ব্যবসায়ী কিংবা স্থানীয় বাজারেই কম দামে ধান বেচে দেন। 

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোয়েতাছেমুর রহমান বলেন, বোরো মৌসুমে নেত্রকোণা জেলার ১০টি উপজেলার ১৪টি খাদ্যগুদামে ২০ হাজার ৯৭৩ টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭মে থেকে শুরু হওয়া ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতি কেজি ধানের দাম ৩২ টাকা ধরা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৪ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ধান সংগ্রহ অভিযান সফল হবে।

টিএইচ