মাতুয়া সমপ্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের লক্ষ্মীখালী এলাকা। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত বারুণী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা। বিশাল পুকুরে পুণ্য স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচনের আশা করেন ভক্তরা।
বারুণী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা উপলক্ষে গত বুধবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা লক্ষ্মীখালী হরিচাঁদ গোপাল ঠাকুরের আশ্রম বাড়িতে আসতে শুরু করেন। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী রাতে আশ্রমের সামনে থাকা পুকুরে গোসল শুরু হয়, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ১টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গোসল করেন ভক্ত দর্শনার্থীরা।
এই সময়ে বিশাল পুকুরে কয়েক হাজার নারী পুরুষ গোসল করে পাপ মোচনের চেষ্টা করবেন। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) আশ্রম এলাকায় ভক্ত-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। আশ্রমে প্রবেশের দুই পাশের দুই সড়ক থেকে ঢাক ঢোল বাজিয়ে, মাতুয়া সমপ্রদায়ের নির্দিষ্ট পতাকা উড়িয়ে দলে দলে ভক্তরা আসছেন এখানে।
পুণ্য স্নানের পাশাপাশি কীর্তন গান, ধর্মীয় আলোচনাসহ প্রার্থনা অংশগ্রহণ করেন ভক্ত মাতুয়া সমপ্রদায়ের লোকেরা। মাতুয়া সমপ্রদায়ের মূল দর্শন মানুষের সেবার অংশ হিসেবে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের খাবার আয়োজন করেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বারণ ইচ্ছা নামে আগে তোদের একে অপরের সাথে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়।
গোপালগঞ্জ থেকে আসা সাথী দেবনাথ নামের এক নারী বলেন, কয়েক বছর ধরে এখানে আসি। এখানে আসলে আমরা মানসিক প্রশান্তি অনুভব করি। সবার সাথে দেখা হয়। এছাড়া আমরা বিশ্বাস করি এই পুকুরে যে পূণ্যস্নানের ফলে আমাদের পাপ মোচন হয়ে যায়।
এবারের বারুণী স্নানে বাংলাদেশি মতুয়া সমপ্রদায় ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ভুটান থেকে এসেছেন। এবারের ভক্তের সংখ্যা গেল কয়েক বছরের থেকে অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন মাতুয়া সমপ্রদায়ের এই নেতারা।
বাংলাদেশ মাতুয়া মহাসংঘের সহ-সভাপতি রতন কুমার মিত্র বলেন, গেল কয়েক বছরের থেকে এবার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। ভারত ও ভুটান থেকেও কয়েকটি দল এসেছে। খুবই শান্তিপূর্ণভাবে আমরা এই উৎসব ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারব আশাকরি।
এই বিশাল আয়োজনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করেছেন। মেলায় শুধু সনাতন ধর্মালম্ভীরা নয়, মুসলমানরাও সহযোগিতার করেছেন। হিন্দু মুসলিমদের এই মেলবন্ধন সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন আশ্রমের গদিনীশিন ঠাকুর সাগর সাধু ঠাকুর। তিনি বলেন, এই ধামে ১০৩ বছর ধরে বারুনী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
টিএইচ