উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পাঁচপুরুলিয়া গ্রামে ভাতাভোগী- শতবর্ষী বিধবা রহিমা, জমেলা, মরিয়ম ও শাহনাজ জীবিত থেকেও মৃত বানিয়ে বন্ধ হয়েছে তাদের ভাতা। ফলে অনেক কষ্টে তাদের জীবন কাটছে।
গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, চারপাশ শলাকা বেড়া উপরে টিন সেড দ্বারা তৈরি ঘরে থাকেন বয়স্ক বিধবা রহিমারা। স্বামী মারা যাওয়ায় বিধবা ভাতা তিন মাস পরপর পেতেন ১৫শ টাকা। সেই টাকা দিয়ে কোনোরকমে চলত তাদের সংসার। হঠাৎ করে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। জীবিত সেই নারীদের নাম মৃত তালিকায় ওঠায় বন্ধ হয়ে যায় তাদের ভাতা।
ফলে তাদের জীবনযাপন পার করছে আরও অনক দুঃখ কষ্টে। শুধু রহিমারা নয় নাজিরপুর ইউনিয়নে মোট-৩২ জন বিধবা ও বয়স্ক ভাতাভোগীরা একই সমস্যায় পড়েছেন। এর সঠিক তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন বয়স্ক বিধবা নারীরা এবং দ্রুত তাদের ভাতা চাচ্ছেন।
এদিকে নাজিরপুর ইউনিয়নের ১নং পুরুলিয়া ওয়ার্ড মেম্বর মতিউর রহমান এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শুধু রহিমা বেগমের একার সমস্যা নয়। এ ওয়ার্ডে ৯ জনের এমন সমস্যা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটা সংশোধন করে পুনরায় উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন এ সমস্যা হয়েছে সেটি তিনি জানেন না।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস তথ্যে জানা যায়, এ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৯ হাজার ৪৫ জন ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে বয়স্কভাতা ৯ হাজার ১৪৮ জন, বিধবা ভাতা চার হাজার ৬৮৩ জন ও চার হাজার ৯৫৮ জন প্রতিবন্ধী ভাতা সুবিধাভোগীদের প্রতি তিন মাস পরপর মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে দেয়া হয় ভাতা। প্রতিজন বয়স্ক ও বিধবাকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে দেয়া হয়। প্রতিজন প্রতিবন্ধীকে মাসিক ৮৫০ টাকা হারে তিন মাস পর পর দুই হাজার ৫৫০ টাকা দেয়া হয়।
বিধবা ভাতা বঞ্চিত শতবর্ষী রহিমা বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানদি থাকলেও কেউ নিত না খোঁজ। পেতাম সরকারি সহায়তা বিধবা ভাতা। সেই টাকা দিয়ে কোনোরকমে চলত তার জীবন। ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত চার মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে চলছে তার জীবন। বড় কষ্ট নিয়ে চাইলেন সমাধান ও বিচার।
রহিমার মেয়ে রাবিয়া খাতুন বলেন, আমার মা ফোন ব্যবহার জানত না। আমার ফোনে আসত মায়ের টাকা। সেই টাকা দিয়ে মায়ের যাতবীয় খরচ চালাতাম। গত চার মাস ধরে ফোনে টাকা আসে না। ফলে ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে দেখি জীবিত মা মৃত্যু তালিকায় রয়েছে। এটা জিজ্ঞাসায় কোনো উত্তর না পাওয়ায় ফিরে আসি। অসুখে ভুগছে মা। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও কারাতে পারছি না। আর পারছি না মায়ের কষ্ট সহ্য করতে। তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেছেন তিনি।
নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এগুলো দেখেন সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে পুরো ক্ষমতাই তাদের। তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবেন না তিনি।
উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এমন হওয়ার কথা না। ভাতাভোগীরা সবাই টাকা পাবেন। তবে অনেক সময় সার্ভারের সমস্যায় একটু দেরিতেও টাকা ঢোকে।
টিএইচ