দিন যতই যাচ্ছে, ততই বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যার সাথে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অসংখ্য রোগী। ডেঙ্গুর প্রকোপ ও মশার উপদ্রব বাড়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে নগরবাসীর। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, মশক নিধনে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর ডেঙ্গুর ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের। বিভাগের পাশাপাশি বরিশাল শহরেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
গেল বছর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় চিন্তার ভাজ নগরবাসীর কপালে। এর মধ্যে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। তাই এডিস মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি নগরবাসীর। নগরবাসী বলছে, বর্তমানে বরিশালেও মশার উপদ্রব বাড়ছে। সন্ধ্যার দিকে দেখা যায় মশার সংখ্যা। তবে দেশে যেমন বাড়ে ডেঙ্গু, তাতে আমরাও আতঙ্কিত। বরিশালে নাকি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। আগে তো মশার ওষুধ দিতো, এখন আর দেয় না বলে অভিযোগ অনেকের।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য চালু হয়েছে আলাদা ওয়ার্ড। যেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। তবে বেড সংকট থাকায় অনেককেই মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে রোগীদের চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক। তবে রোগীদের সেবায় ওষুধসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উজরপুর থেকে আসা হাবিবুল নামে এক রোগী বলেন, ‘জ্বর উঠছিল প্রচণ্ড। আর শরীর ব্যথা ছিল। প্রথমে ভাবছিলাম স্বাভাবিক, পরে টেস্ট করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। পরে হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখালে চিকিৎসক বলেন, ‘আপনার ডেঙ্গু হয়েছে। আপনাকে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি দিলাম।’ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘আগস্টের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে আমরা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। প্রতি ইউনিটে ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা আছে।
জ্বর ও সুনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সেইসঙ্গে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষায় সারাবছর মশা নিধনসহ অন্য কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের দুইটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ছয়টি সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২৪ জন ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মৃত্যু রোগীদের মধ্যে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিরোজপুরের নেছারাবাদ এলাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান (২০), বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চাঁন মিয়া (৭৫) ও গোশাই দাস (৮৫) নামের দুজন মারা গেছেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মাসের শুরু থেকে বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৪৮৬ জন। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩২৪ জন। আর মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। এর মধ্যে বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বরগুনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩৫৪ জন। আর মৃত সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই বরগুনার।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘বৃষ্টি বাড়লেই আতঙ্ক বেড়ে যায়। কারণ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয়। তখন মশার বিস্তার বেড়ে যায়। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে এবার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ বৃষ্টি ছাড়াও ডেঙ্গু তার প্রভাব বিস্তার করছে। এর বড় কারণ অসচেতনতা।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে ভর্তি হওয়াসহ অনেক রোগী বাসা বাড়িতেও চিকিৎসা নিয়েছে। যার হিসেবে আমাদের কাছে নেই। সেই সংখ্যা থাকলে সবাই বুঝতো ডেঙ্গু কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার মতো সামর্থ্য রয়েছে। সবাই মিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে সকলের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই’ দাবি করে তিনি বলেন, মশা যেন জন্ম নিতে পারে এমন সব জায়গা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
টিএইচ