মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

ডুয়েট শিক্ষিকার অশ্লীল টিকটক ভিডিও ভাইরাল 

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডুয়েট শিক্ষিকার অশ্লীল টিকটক ভিডিও ভাইরাল 

আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি আর কুরুচিকর অশ্লীল ‘টিকটক’ ভিডিও নেট দুনিয়ায় চড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হয়েছেন ডুয়েট শিক্ষিকা নিশাদ জাহান ইতু মিয়াজি। ইতোমধ্যে তিনি  ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) আর্কিটেকচার বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তার নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষিকার নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলে এ মানববন্ধন করেছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, টিকটকে ভিডিও নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা এমন শিক্ষক চাই না, যার রুচিবোধ, আচার-আচরণ সমাজের প্রচলিত শিক্ষক, শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একজন শিক্ষক শুধু একাডেমিক্যালি কিছু শেখাবেন বিষয়টা এমন নয়। তার সামগ্রিক সবকিছু শিক্ষার্থীরা ফলো করে, তার কাছে থেকে পড়াশোনার বাইরেও নানা কিছু শিখে। ইতু মিয়াজী কুরুচিকর ভিডিও করেন বলেই তারা তাকে শিক্ষিকা হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতু মিয়াজীর একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে। যার মধ্যে একটি ভিডিওতে ইতু মিয়াজিতে বলতে শোনা যায়, ‘জন্ম থেকে যখন আমি প্রথম চোখ খুলি তখন আমার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আমি টিকটকার হব। আরেকটি ভিডিওতে তিনি বলেন, যারা ছাগল, গরু চোর, ওরা টিকটক করে। বেশ কিছু ভিডিওতে কুরুচিকর অঙ্গভঙ্গ এবং আপত্তিকর কথাবার্তারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ইতু মিয়াজি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে আর্কিটেকচার বিভাগ থেকে পাস করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে। যার মধ্যে একটি ভিডিওতে ইতু মিয়াজিকে বলতে শোনা যায়, ‘জন্ম থেকে যখন আমি প্রথম চোখ খুলি তখন আমার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আমি টিকটকার হবো। আরেকটি ভিডিওতে তিনি বলেন, যারা ছাগল, গরু চোর, ওরা টিকটক করে।

অপর আরেকটি ভিডিওতে দর্শকদের উদ্দেশ্যে ইতু মিয়াজি বলেন, ‘আমি জানি তোমরা অনেকেই চাও না আমি টিকটক করি...সেজন্যই আমি ইউটিউবে নতুন একটি ভিডিও আপলোড করেছি। সেখানে যদি আমি সাড়া পাই তাহলে আমার এই থোবড়া, নাচানাচি, আমার কোমর-টোমর আর তোমাদের দেখতে হবে না.....।’ এ ছাড়া বেশ কিছু ভিডিওতে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং আপত্তিকর কথাবার্তারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ডে যারা থাকেন তারা কী কেউ ‘টিকটক’ দেখে? বিষয়টি যেহেতু এখন সামনে এসেছে তাই আমরা এটি খতিয়ে দেখছি। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আর্কিটেকচার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বায়েজিদ ইসমাইল চৌধুরী  বলেন, সকল প্রক্রিয়া মেনেই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তাকে (ইতু মিয়াজী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা দাবি করেছে, ইতু মিয়াজি টিকটকে আপত্তিকর কনটেন্ট প্রচার করেন। তাকে শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে শিগগির একটি কমিটি গঠন করা হবে।

বায়েজিদ ইসমাইল চৌধুরী আরও  বলেন, ইতোমধ্যে ওই শিক্ষিকাকে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি বুধবার থেকে তাকে এক সপ্তাহের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

আপনি কী ইতু মিয়াজির ভিডিওগুলো দেখেছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তার ইউটিউবের কনটেন্টগুলো দেখেছি। সেখানে আপত্তিকর কিছু নেই। তবে আমি কখনও টিকটক দেখিনি। এটা আমার রুচিতে নেই না। ফলে টিকটকে কী আছে সেটা বলতে পারব না। তবে টিকটকে ভিডিও বানানো মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এর কনটেন্ট নিয়েই শিক্ষার্থীদের আপত্তি। এখন তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।’

তবে যার বিরুদ্ধে এই আপত্তি সেই ইতু মিয়াজির মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, টিকটিক ভিডিও তৈরি করা নিয়ে আমাদেরও কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি করছি তার কুরুচীপূর্ণ কনটেন্ট নিয়ে। কিন্তু যেহেতু শিক্ষকতা একটা মহান পেশা, তিনি শিক্ষার্থীদের নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দেবেন, সেখানে এ ধরনের একজন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া আসলেই বেমানান।

ইতু মিয়াজিকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন। তবে তার সমালোচনাকারীর সংখ্যাই অনেক বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জার্মান প্রবাসী কাজী আলীম উদ্দীন তার ফেসবুকে লিখেছেন, "দুর্জন বিদ্বান হলেও তা পরিত্যাজ্য", ঠিক তেমনই "সোশ্যালমিডিয়ার সাইকোরা বিদ্বান হলেও তা পরিত্যাজ্য। আশা করি সামাজিক অবক্ষয় প্রশমনে ডুয়েট প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থা নেবে এবং আমার ডুয়েটেই অনেক ব্রিলিয়ান্ট শিক্ষিক খুঁজে পাব যারা জ্ঞানের আলো ছড়াবে।’

বশিরুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘হয়তো ক্লাসে কোনদিন এমনও কথা শুনতে হতে পারে...!!! আজকের সকালে নতুন একটা ভিডিও শেয়ার করেছি,, আমার প্রিয় ছাত্ররা, তোমরা কি সেটা দেখেছ? তখন ছাত্ররা বলবে- ম্যাডাম সকালে সিটি (ক্লাস টেস্ট) ছিল তাই দেখতে পারিনি। এখন দেখি ম্যাডাম...।’

টিএইচ