শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
ঢাকা শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
The Daily Post
প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়োগ পরীক্ষা

দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার-বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার-বহিষ্কার
  • ডিভাইস জালিয়াতিতে গ্রেপ্তার ৪৫
  • অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার ৭০

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে এ নিয়োগ পরীক্ষা হয়। দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ডিভাইস জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

নওগাঁয় গ্রেপ্তার ১৪, বহিষ্কার ৪৪ : অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে নওগাঁয় ৪৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে নওগাঁর ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে পরীক্ষা চলাকালে আটক করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা।

জেলা প্রশাসক জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে মান্দা উপজেলার মমিন শাহানা সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে মিঠুন, সুলতান ও রবিউল ইসলাম নামে তিনজন চাকরি প্রত্যাশীর কাছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়। এ অপরাধে মিঠুনকে এক মাস, সুলতানকে এক মাস এবং রবিউল ইসলামকে ১০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। 

একই উপজেলার শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল কেন্দ্র থেকে আটক নাইমুর রহমান ও মোস্তাফিজুর বিন আমিনকে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মান্দা থানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আরও পাঁচ জনকে আটক করা হয়। 

যেখানে জারজিস আলমকে ১০ দিন, ফজলে রাব্বি মণ্ডলকে এক মাস, নুর আলমকে সাত দিন, জামাল উদ্দিনকে ১০ দিন এবং আব্দুল্লাহ সাইরাফিকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলার বশির উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ (বিএমসি) কেন্দ্রে দুজনকে ৫০০ টাকা করে মোট এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

সদর উপজেলার চক এনায়েত উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাহাড়পুর জিএম হাইস্কুল কেন্দ্র করে একজন করে মোট দুজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলায় একজনকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বদলগাছী উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দের পর তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।

শেরপুরে গ্রেপ্তার তিন, বহিষ্কার ৩৯ : শেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ব্যবহার করার অভিযোগে তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সাথে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে ৩৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল হক। 

দণ্ড পাওয়াদের মধ্যে শেরপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রের সেমিনা বেগম ও শেরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের রফিকুল ইসলামকে এক মাস এবং আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রের শফিকুল ইসলামকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

জয়পুরহাটে আটক তিন : জয়পুরহাটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন— জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার বাঁশখুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান, একই উপজেলার তাজপুর গ্রামের মোস্তাকিম হোসাইন ও আক্কেলপুরের গোপীনাথপুর এলাকার মোছা. সানজিদা বেগম। 

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারসহ অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে আসা তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার ১২টি কেন্দ্রে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এসবের মধ্যে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও জয়পুরহাট সিদ্দিকিয়া কামিল মডেল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারসহ অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন।

কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার এক, বহিষ্কার পাঁচ : কুষ্টিয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শিট পরিবর্তন করার অভিযোগে সুমন (২৭) নামে এক যুবককে সাত দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরীক্ষার শিটের নিচের অংশ পূরণ না করায় পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৬৩০ জন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন উদ্দিন অভিযুক্তদের উপস্থিতিতেই এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত যুবক সুমনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সাজাপ্রাপ্ত যুবক হলেন— কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রামনগর গ্রামের রফিকুলের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক প্রমাণ শেষে  সুমন নামে ওই যুবককে সাত দিনে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়।

জামালপুরে গ্রেপ্তার দুই : জামালপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সহকারী শিক্ষকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-১) এর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ। 

এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের মির্জা আজম চত্বর থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। 

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন— জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার পুগলদিগা ইউনিয়নের রুদ্র বয়রা এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৪৮)। তিনি সরিষাবাড়ী পূর্ব বয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। অপরজন ইসলামপুর উপজেলার কান্দারচর ফকির বাড়ির মো. সাবেদ আলীর ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান মিনার (৩৬)। 

ডিবি পুলিশ জানায়, জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানের সার্বিক নির্দেশনায় অফিসার ইনচার্জ কাজী শাহনেওয়াজের তত্ত্বাবধানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

এ সময় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কাছে টাকা নেয়ার অভিযোগে সহকারী শিক্ষকসহ দুজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তিনটি প্রবেশপত্র, চারটি মোবাইল ফোন, একটি ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে নেয়া এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। 

বগুড়ায় গ্রেপ্তার ২২, বহিষ্কার ২৬ : জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও নানা কারণে বহিষ্কার হয়েছেন আরও ২৬ জন। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারসহ নানাভাবে অসদুপায় অবলম্বন করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, আটকদের মধ্যে এপিবিন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে একজন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে চারজন, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তিনজন, বগুড়া সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনজন, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে একজন, বগুড়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে একজন, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ থেকে একজন, বগুড়া সরকারি কলেজ থেকে একজন এবং বগুড়া পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে চারজন রয়েছেন। 

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় পর্বে মোট পরীক্ষার্থী চার লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ জন। কেন্দ্রের সংখ্যা ৬০৩টি, কক্ষের সংখ্যা ৯ হাজার ৩৫৭টি।

টিএইচ