গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান বাড়িয়ে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
রোববার দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
গত শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রীসভা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য পাঁচটি নীতি অনুমোদন দেয়, যার মধ্যে একটি ছিল গাজা উপত্যকার ‘নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ’। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজা শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
‘দ্য টাইমস অব ইসরায়েল’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় গাজা উপত্যকার বৃহত্তম শহর গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। গাজায় বন্দি ৫০ জন জিম্মির মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনও জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এ পরিকল্পনা জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলবে। তারা সরকারকে জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানায়।
জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি নেতারা সমালোচনা অগ্রাহ্য করে বলেছে, সামরিক অভিযান জিম্মিদের মুক্তিতে সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিরা সামাজিক মাধ্যম এক্সে বলেন, সামরিক অভিযানের ফলে যুদ্ধ আরও তীব্র হবে এবং জিম্মিরা বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তারা এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।
জেরুজালেমের বিক্ষোভে এক নারী বলেন, “আমরা যুদ্ধ বন্ধ চাই। কারণ আমাদের জিম্মিরা গাজায় বন্দি রয়েছে এবং মারা যাচ্ছে। তাদের সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
সাবেক সেনাসদস্যরা বলেছেন, তারা নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকার করছেন, কারণ এতে জিম্মিদের পাশাপাশি নিরীহ ফিলিস্তিনিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তেল আবিবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তরের কাছে বিক্ষোভ হয়, যেখানে জিম্মি ও সৈন্য পরিবারের সদস্যরা সামরিক অভিযান বাড়ানোর প্রতিবাদ জানান। এক জিম্মির মা দেশজুড়ে ধর্মঘট ডাকার ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন এতে সমর্থন দিচ্ছে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি নেয়া হয়। এরপর গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু হয়। এই যুদ্ধে প্রায় দুই বছরে অন্তত ৬১,৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ২১ লাখ বাসিন্দার অধিকাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ের পরিপন্থি এই পরিকল্পনা।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় নেতানিয়াহুর ঘোষণাকে ‘নির্জলা অপরাধ’ ও ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েলকে বড় মূল্য দিতে হবে এবং বাকি সব জিম্মিকে হারাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এ সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন। জার্মানি গাজায় ব্যবহার সম্ভাব্য অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করেছে। চীনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শনিবার জরুরি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৫ সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা বাদে বাকি সদস্যরা এই আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
টিএইচ