শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Post

জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয় : আসাদুজ্জামান রিপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয় : আসাদুজ্জামান রিপন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যে দল জনগণের বিরুদ্ধে যায়, সেই দল অটোমেটিক বিলুপ্ত হয়ে যায়।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত ‘সারাদেশের বিভিন্ন স্তরে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী দোসরদের গ্রেপ্তার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ দ্রুত সৃষ্টি করার দাবিতে’ আয়োজিত প্রতীকী তারুণ্য সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. রিপন বলেন, “আওয়ামী লীগ ভুল রাজনীতি করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, লুটপাট করেছে এবং জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ বিলুপ্তির পথে রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বলে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না, সেটা বড় কথা নয়। তাদের ভুল রাজনীতির কারণে জনগণই আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করবে। এই রাজনীতি দেশে আর ফিরে আসার সুযোগ নেই।”

বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, “আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিজয় অর্জন করেছি, যার সূচনা হয়েছিল ১৭ বছর আগে। এই বিজয়ের মাধ্যমে আমরা আশা করেছিলাম, জনগণ শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি ও রাষ্ট্রপতিসহ সরকারি কর্মকর্তারা যেন নিজেদেরকে মোগল সম্রাট না ভাবেন—সেই ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটবে।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে সরকার জবাবদিহিতার আওতায় থাকবে।”

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে ড. রিপন বলেন, “কিছুদিন আগে সরকারি কর্মচারীদের একটি আন্দোলন হয়েছে, যেখানে তারা দাবি করেছেন—তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না। কেন যাবে না? তারা ঘুষ খাবেন, দুর্নীতি করবেন, অথচ তাদেরকে কিছু বলা যাবে না? ১৪ হাজার টাকা বেতন পাওয়া একজন কর্মচারী ঢাকায় দুটি বাড়ি বানাচ্ছেন, সন্তানদের বিদেশে পড়াচ্ছেন—এটি কীভাবে সম্ভব? অথচ একজন মন্ত্রী দুর্নীতি করলে বলা হয়, রাজনীতিবিদরা চোর! তবে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সম্পর্কে বলা যাবে না যে, সে মহাচোর? এই অব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি, এসপি, ইউএনওরা দিনের ভোট রাতে করেছেন। অথচ তারা এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন এবং প্রমোশনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের অতীতের আচরণের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।”

ড. রিপন বলেন, “আমার দল (বিএনপি) অনেক সময় বলে না, কিন্তু সত্য হলো—২০০৯ সালেও মহা-পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনা যায়। ১/১১ এবং ২০০৮-০৯ সালের নির্বাচন ভারতের কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়েছিল। এর ফলেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি অবৈধ শাসনের ভিত্তি গড়ে ওঠে।”

তিনি বলেন, “প্রশাসনে এখনো যেসব আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা ঘাপটি মেরে বসে আছেন এবং বিগত তিনটি নির্বাচনে অনৈতিক ভূমিকা রেখেছেন, তাদেরকে প্রশাসন ও সচিবালয় থেকে অপসারণ করতে হবে। দেশের হাজার হাজার তরুণ এখনো বেকার, অথচ কিছু দলীয় কর্মকর্তা বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।”

ড. রিপন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “এই মহাচোরদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু, রহিমা শিকদার প্রমুখ।

টিএইচ