কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী হত্যা মামলায় ১৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমিন বিপ্লব এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় ১৩ আসামির মধ্যে সাতজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি ছয়জন রায়ে দণ্ডিত হলেও পলাতক রয়েছেন।
সৈয়দ আলী করিমগঞ্জ উপজেলার দেওপুর (কজলাহাটি) গ্রামের হাজী সুন্দর আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন তরুণ ব্যবসায়ী ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, আসামিদের সঙ্গে সৈয়দ আলীর পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির সীমানাসংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ নিয়ামতপুর বাজারের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে ফেরার পথে সৈয়দ আলীর ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষরা।
দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। পরে তাকে প্রথমে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। টানা ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ২৯ মার্চ ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ আলী।
ঘটনার দু’দিন পর, ২৫ মার্চ নিহতের বড় বোন পারভীন সুলতানা বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তৎকালীন উপপুলিশ পরিদর্শক মো. শহর আলী। এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলতে থাকে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে। একাধিক সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত অবশেষে বৃহস্পতিবার ১৩ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাড. জালাল উদ্দিন বলেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ড। আমরা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
রায়ের পর নিহত সৈয়দ আলীর পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তির অনুভূতি দেখা যায়। আদালতের বাইরে উপস্থিত থাকা স্বজনরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা এতদিন শুধু অপেক্ষা করেছি এই রায়ের জন্য। অবশেষে বিচার পেয়েছি। তবে এখনো পলাতক থাকা ছয় আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকরের দাবি জানান নিহতের পরিবার।
টিএইচ