বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Post

খাঁচাবন্দি ৪ শিশুকে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জান্নাত

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

খাঁচাবন্দি ৪ শিশুকে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জান্নাত

ঠাকুরগাঁও পরিষদপাড়া কিংবা কাঁচাবাজার আড়ৎ এলাকায় গেলে দেখা মিলবে লোহার খাঁচা দিয়ে বানানো ঠেলা গাড়িতে ১৩ মাস বয়সী তিন শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন জান্নাত। খাঁচার পাশে তার সঙ্গেই হাঁটছে সাড়ে ৩ বছর বয়সী আরও একটি শিশু।

জানাগেছে, ১৩ মাস বয়সী তিন জমজ শিশু আব্দুল্লাহ, আমেনা ও আয়শা। সেইসঙ্গে সাড়ে ৩ বছর বয়সি মরিয়মসহ ৪ শিশু সন্তানের জননী জান্নাত বেগম। বছর পাঁচেক আগে ঢাকায় বিয়ে হয় ঠাকুরগাঁওয়ের হাবিলের সঙ্গে। প্রেমের পরে বিয়ে করে ঠাকুরগাঁও আসে ময়মনসিংহের মেয়ে জান্নাত।

তবে প্রথমে এক কন্যা সন্তান ও পরে একই সঙ্গে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানকে জন্মদানের কিছুদিন পরেই জান্নাতকে ছেড়ে চলে যায় হাবিল। এরপর থেকেই ৪ শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পরেন অল্প বয়সী সংগ্রামী এ মা। অল্প বয়সী চার শিশুকে রেখে কোথাও কাজ করে উপার্জনের উপায় পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে যেভাবেই হোক সন্তানদের ক্ষুধা নিবারণ করতে এক অভিনব উপায় খুঁজে বের করেন তিনি। ৭ হাজার টাকা খরচ করে চাকা লাগানো একটি লোহার খাঁচা তৈরি করেন।

সেই খাঁচার ভিতরে ১৩ মাসের তিন শিশুকে নিয়ে এবং সঙ্গে সাড়ে ৩ বছরে আরেক শিশুকে সঙ্গে বেরিয়ে যান সাহায্যের আশায়। বিভিন্ন সময় অনেকেই তার সন্তানদের কিনে নিতে লাখ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সন্তানদের প্রতি মায়ার কাছে হার মেনেছে টাকার সে প্রলোভন।

জান্নাত বেগম জানান, আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি। যা আমার জন্যে অবশ্যই লজ্জার। তবে এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন সময় বাসাবাড়িতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু ছোটো ৪ শিশু বাচ্চাদের কার কাছে রেখে কাজে যাবো? তাই আমার পক্ষে কোথাও কাজ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি।

সন্তানদের এই খাঁচায় করে নিয়েই এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাহায্য তুলি। তবে এভাবে ঘুরে খুব বেশি পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারি না। তাই আমার সন্তানদের যথাযোগ্য পুষ্টিকর খাবার কখনো দিতে পারি না। অনেক সময় তারা পেট ভরে খাবারও পায়না।

জান্নাতের প্রতিবেশীরা প্রায়শই তার এই কষ্টের জীবন দেখে আফসোস করে। অনেক সময় তারা জান্নাতের সন্তানদের ক্ষুধার জ্বালায় কান্নাকাটি করতেও দেখে। সেসময় কিছু প্রতিবেশী সাহায্যে এগিয়ে যায়। এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা জানা ছিলো না। আমি দ্রুতই এর খোঁজখবর নিবো। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও প্রশাসন যতটা সম্ভব তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।

টিএইচ