ফরিদপুরের মধুখালীতে রাজন হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অনাদায়ে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়া মামলার প্রমাণ লোপাটের দায়ে ওই পাঁচজনকে আরও ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালতের বিচারক। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এ আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত।
রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মো. আরমান হোসেন, মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলন, মো. মামুন শেখ ও ইলিয়াছ মৃধা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি আছাদ শেখ পলাতক রয়েছেন। পরে পুলিশ পাহারায় আদালত থেকে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদের সবার বাড়ি জেলার মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়া মামলার অন্য আসামি মো. হাসান সিকদার ও মো. আশরাফুল শিকদার-দ্বয়কে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক খালাস প্রদান করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহ মো. রাজন তার মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে থাকে। নিখোঁজের চার দিন পর রাজনের ব্যবহূত পালসার মোটরসাইকেলটি মধুখালী উপজেলার তারাপুর শ্মশানঘাট সংলগ্ন মধুমতি নদীর পানিতে জেলেরা মাছ ধরার সময় পায়।
পরে পুলিশ মামুনের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বসতঘর তল্লাশী করে মামুনের ব্যবহূত প্যান্টের পকেটে রাজনের ব্যবহূত মোবাইল সেটটি পেয়ে কললিস্টের সূত্র ধরে আরমান হোসেনকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরমান স্বীকার করে রাজনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মামুনের সহায়তায় কৌশলে কুড়ানিয়ার চর এলাকায় একটি বাগানে ডেকে নিয়ে গিয়ে আছাদ ও মামুন শেখ সহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন ধারালো অস্ত্র দিয়া কুপিয়ে হত্যা করে লাশ উক্ত বাগানের মাটির নীচে চাপা দিয়া রাখে। পরে পুলিশ মাটি খুড়ে রাজনের লাশ উত্তোলন করে।
হত্যাকাণ্ডে মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলনসহ অন্যরা লাশ ময়না তদন্তে বাঁধা দেয়া, বিবিধ নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও পারিপার্শ্বিকতায় হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ। এঘটনায় নিহত রাজনের মা জোৎন্সা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে পুলিশ। দীর্ঘ সাক্ষী ও শুনানী শেষে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালতের বিচারক।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রকিবুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, দীর্ঘ সাক্ষী ও শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আদালতের বিচারক রাজন হত্যা মামলায় ৫জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে একজন পলাতক রয়েছে। অন্যরা আদালতে হাজির ছিলেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অনাদায়ে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
টিএইচ