শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Post
বরিশাল মহানগর বিএনপি

চার বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি সম্মেলন

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

চার বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি সম্মেলন

বরিশাল মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ২০২১ সালে বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। নানা জটিলতা, কোন্দল, ও নেতৃত্ব সংকটে বারবার সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এতে করে মহানগর বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা ও ক্ষোভ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ করার কথা থাকলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বরং সময়ে সময়ে আহ্বায়ক কমিটি পরিবর্তন হলেও ফলাফল থেকেছে শূন্য। বর্তমানে মহানগর বিএনপি অন্তত তিনটি ভাগে বিভক্ত-একদিকে বর্তমান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বাধীন অংশ, অন্যদিকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিনের অনুসারী অংশ, এবং সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদের নেতৃত্বাধীন অংশ।

বিভক্তির এই চিত্র শুধু মহানগরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরিশাল বিভাগের প্রায় সব জেলা ও ইউনিটেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। বরিশাল বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্বে থাকা অ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীদের নতুন কমিটিতে জায়গা না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে একটি শক্তিশালী গ্রুপ রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করেছে। গত ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হলেও সম্মেলনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হয়নি। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক জানান, বর্তমানে আমরা ৩০টি ওয়ার্ডে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এই কার্যক্রম শেষ হলে আমরা ওয়ার্ড সম্মেলন করবো এবং পরে মহানগর সম্মেলনের দিকে এগোবো। 
তবে কখন সম্মেলন হবে এ প্রশ্নের উত্তর এখনও অস্পষ্ট।

সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন শিকদার বলেন, হাই কমান্ড থেকে আমাদের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। অন্যদিকে, আফরোজা নাসরিন বলেন, সম্মেলনের আগেই সব ওয়ার্ডে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব আসবে, যেখানে কোনো গ্রুপিং থাকবে না। তবে নেতাদের আশ্বাসের পরও তৃণমূলের হতাশা বাড়ছে। এদিকে ইসলামী জোট বরিশালের মাঠে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, বিএনপি তো মাঠেই আছে। বরিশালের ঘরে ঘরে বিএনপি। নির্বাচন এলে বোঝা যাবে মাঠ কার দখলে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল মহানগর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হাসান মামুন বলেন, ওয়ার্ডভিত্তিক সম্মেলন শেষ হলেই মহানগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সদস্যদের ভোটেই নতুন নেতৃত্ব আসবে। তরুণ ও অভিজ্ঞ উভয় নেতাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকলেও তা এখন দলীয় ঐক্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে যদি ব্যক্তিগত আধিপত্যের লড়াই চলতেই থাকে, তবে সম্মেলন আয়োজন শুধু কঠিনই নয়, দলের রাজনৈতিক মাঠে অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়বে।

তবে আশা করা হচ্ছে, যদি ওয়ার্ড সম্মেলনসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, তাহলে ২০২৫ সালের আগস্ট মাসের মধ্যেই মহানগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেই সম্মেলনে ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী ও মাঠপর্যায়ে সক্রিয় নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বরিশাল মহানগরের নেতৃত্বের বিভক্তি উদ্বেগজনক। আমরা তা নিরসনে কাজ করছি। দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এখন একটাই প্রশ্ন  “সম্মেলনের প্রতিশ্রুতি আর কতদিন?” সময়ই বলবে বরিশাল মহানগর বিএনপি শেষ পর্যন্ত নিজেদের বিভক্তি কাটিয়ে নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে পারবে কিনা।

টিএইচ