সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫
ঢাকা সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

যশোরে তাপমাত্রায় হ্যাচারিতে অক্সিজেন সংকটে মারা যাচ্ছে রেণু ও পোনা মাছ

যশোর প্রতিনিধি

যশোরে তাপমাত্রায় হ্যাচারিতে অক্সিজেন সংকটে মারা যাচ্ছে রেণু ও পোনা মাছ

প্রায় সপ্তাহ ধরে যশোরের চলছে ৪০ বা অধিক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এই  প্রচণ্ড তাপদহনে কাহিল প্রাণিকুল। তীব্র গরমে যশোরের মৎস্যপল্লি নামে খ্যাত চাঁচড়ায় হ্যাচারিগুলোতে অক্সিজেন সংকটের কারণে রেণু ও পোনা মাছ মারা যাচ্ছে। এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন রেণুপোনা উৎপাদনকারীরা। উদ্যোক্তারা বলেন, ইতোমধ্যে গত কয়েকদিনে তাদের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

মৎস্য চাষিরা জানান, যশোরে গত ৮-৯ দিন ধরে চলছে তীব্র তাপদাহ। অথচ রেণু উৎপাদনে পানির স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপযোগী। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে হ্যাচারিগুলোর পানি গরম হয়ে যাওয়ায় রেণু পোনা মাছ মারা যাচ্ছে। ফলে অনেকে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন।

আবহাওয়ার এ প্রতিকূল অবস্থা চলতে থাকলে রেণু পোনা উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন মাছচাষিরা। এ পরিস্থিতিতে জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি দেয়া, কচুরিপানা-কলমি চাষ এবং পাড়ে কলা ও পেঁপে গাছ রোপণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

হ্যাচারি মালিকরা জানান, দেশে রেণু পোনা উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে যশোর। সাধারণত ফাল্গুন মাস থেকে শুরু হয় রেণু উৎপাদনের মৌসুম। এরপর চলে মধ্য আষাঢ়? পর্যন্ত রেণু পোনা উৎপাদন ও বিপণন। আর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ হচ্ছে রেণু ও পোনা মাছ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। যশোরে এক সপ্তাহ ধরে ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। এ তাপমাত্রায় পোনা মাছ ও রেণু উৎপাদন করা সম্ভব না।

চাঁচড়া মৎস্য পোনা চাষি ও ব্যবসায়ী হাফেজ  বলেন, আমার তিনটি  পুকুর আছে। তিনটি  পুকুরে সাদা মাছের পোনা উৎপাদন করে থাকি। বর্তমানে তাপপ্রবাহে পোনা উৎপাদন করতে পারছি না। প্রচণ্ড গরমে পানি গরম হয়ে মাছের ডিম ও ব্রুট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই কথা বলেন আরেক রেণু পোনা চাষি শিহাব আরও বলেন ‘তাপপ্রবাহের কারণে পুকুরের তলে গ্যাস হয়ে পানি গরম হয়ে যাচ্ছে। ফলে পোনা মাছ মারা যাচ্ছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেণু-পোনা উৎপাদনে যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জেলায় ৩৬টি হ্যাচারিতে রেণু ও চারা মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কার্প জাতীয় রেণু-পোনা উৎপাদন হয় প্রায় ৬৫ টন। জেলায় রেণু-পোনার চাহিদা ১৫ টনের একটু বেশি। উদ্বৃত্ত ৫০ টন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া তেলাপিয়া পোনা, পাঙাশ রেণু, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলসা, রুই, কাতলা, মৃগেল, বিগহেড, থাইসরপুটি, কৈ, থাই কৈ, পাঙাশ প্রভৃতি মাছের রেণু পোনা উৎপাদন হয় যশোরের মৎস্যপল্লি চাঁচড়াতে। হ্যাচারির পাশাপাশি যশোরে ২ থেকে ৩ হাজার নার্সারি রয়েছে। জেলার ২ লাখ লোক মাছ উৎপাদন, চাষ এবং এ সংশ্লিষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া বেশ ভালো ছিল। কিন্তু সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপপ্রবাহে রেণু উৎপাদন একেবারে কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে হ্যাচারিগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। রুপালি ফিশ হ্যাচারির মাসুদুল মণ্ডল বলেন, গরমে মাছের অক্সিজেন ফেল করছে। আমাদের যতগুলো মোটর আছে সব চালিয়েও পানি ঠান্ডা করা সম্ভব হচ্ছে না। এত গরমে রেণু পোনা বাঁচানো সম্ভব না। যা বাঁচবে তাতে খরচ উঠবে না।

যশোর জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির নেতা ফিরোজ খান বলেন, তীব্র গরমের কারণে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সহসা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মৎস্য উৎপাদনে জাতীয় বিপর্যয় দেখা দেবে। তিনি আরও জানান, যশোরের ৩৬টি হ্যাচারিতে বছরে দেড় লাখ কেজি রেণু উৎপাদন করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

যশোর জেলা মৎস্য অফিসার সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এমতাবস্থায় পোনা চাষিদের হ্যাচারি বা ঘেরে প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানির স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে যাতে থাকে সে চেষ্টা করতে হবে। তাহলে পোনা উৎপাদনে সমস্যা হবে না।

টিএইচ