সমপ্রতি কদিনের টানা বৃষ্টিতে অভয়নগর উপজেলার গুয়াখোলা এলাকায় সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় শতাধিক পরিবার। গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকা গত ২০ দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
নওয়াপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডিএন মোড় সংলগ্ন গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের প্রায় ৪০টি বাড়িতে বসবাস করা প্রায় ৩০০ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এতে প্রায় ৪০টি বাড়ির তিন শতাধিক বাসিন্দার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলেও পড়তে হচ্ছে নানা ঝুঁকিতে।
কাপড় গুটিয়ে পানি মাড়িয়ে চলাচল করলেও প্রায়ই পা পিছলে আহত হচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেক সময় বই-খাতা ভিজে যাওয়ায় পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আগে এই এলাকার পানি তাকবির মসজিদের পাশ দিয়ে ড্রেন হয়ে ভৈরব নদে যেত। কিন্তু বর্তমানে ওই এলাকায় ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। আগে বৃষ্টির পানি তাকবির মসজিদের মাঠের পাশ দিয়ে ড্রেন হয়ে ভৈরব নদে চলে যেত। কিন্তু সমপ্রতি সেখানে বসতবাড়ি ও মাছের ঘের তৈরি হওয়ায় পানি চলাচলের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার কারণে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। যারা যাচ্ছে তারা পোশাক ও বই খাতা ভিজিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ হাঁটু পানি পেরিয়ে স্কুলে এলেও ক্লাসে উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এলাকায় ইতোমধ্যে চর্মরোগ, পেটের পীড়া ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এতটাই বেড়েছে যে, এলাকার বেশ কয়েকটি ভাড়াটিয়া পরিবার জলাবদ্ধতা সহ্য করতে না পেরে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এতে বাড়ির মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, আমরা প্রায় ২০ দিন ধরে পানির মধ্যে বসবাস করছি। বাইরে গেলে আর ঘরে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না, ঘরে থাকলেও মনে হয় বন্দি হয়ে আছি। ইউএনও সাহেব বলেছিলেন, তিনি এসে দেখবেন, কিন্তু এখনো আসেননি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের জীবনযাপন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে জলাবদ্ধতা চলছে। স্কুলের মাঠ নেই, তাই শিশুরা রাস্তার ওপরেই খেলাধুলা করত। এখন সেটিও বন্ধ। স্কুলে আসতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে, বই-খাতা ভিজে নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যের কোটায় নেমে যাবে। এছাড়া অনেকের শরীরে পানির কারণে চুলকানি ও চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
টিএইচ